বড়োল্যান্ড ভোটের ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য কী ইঙ্গিত

।। প্রদীপ দত্তরায় ।। 
(লেখক প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী)
৮ অক্টোবর : বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল বা বিটিসির এবারের নির্বাচনের ফলাফল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে যেমন শাসক বিজেপি হিন্দু ভোট দাতাদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ঠিক তেমনি কংগ্রেস বাঙালি মুসলমানদের ভোট কব্জা করতে ব্যর্থ হয়েছে। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালিরা শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য হাগ্রামা মহিলারের নেতৃত্বাধীন বিপিএফ দলের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। কেবল বাঙালিরাই নয় ওই অঞ্চলে বসবাসকারী সাঁওতাল, কোচ রাজবংশী সহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর  সিংহভাগ ভোট বিপিএফের ঝুলিতেই গেছে। ফলে, এবার আশাতীত সাফল্যের মুখ দেখতে পেরেছে বিপিএফ। বড়োভূমি এলাকার মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি শাসকদলের কাছে এলাকার উন্নয়ন চান। গত পাঁচ বছরে স্থানীয় মানুষের সমস্যাবলীর সমাধানে তেমন কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি যা ওই অঞ্চলের মানুষকে শাসক ইউপিপিএল দলের প্রতি বিতশ্রদ্ধ করে তুলেছে। একইভাবে বিজেপির হাই ভোল্টেজ প্রচার হলেও তাতে মানুষের মন গলেনি। কংগ্রেস দল চল্লিশটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এই ভোটে কোন দাগ কাটতে পারেনি।  যার ফলে ফলাফল যেমন হওয়ার তেমনটাই হয়েছে এবং এই ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য  প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলির কাছে অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিটিসি ভোটের ফলাফল প্রভাব ফেলবে এমনটা মনে করা হচ্ছে।

বাঙালিরা বিজেপি দলের ওপর কেন এত খাপ্পা হয়ে উঠলেন এর কারণ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, সারা রাজ্যে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাঙালিদের সঙ্গে ব্যাপক বঞ্চনা করা হয়েছে। রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ চাকরি দেওয়া হল এর মধ্যে বাঙালিদের চাকরি জুটেছে মাত্র দু হাজারের মতো। কর্মসংস্থানহীনতার এই অবস্থা মানুষকে বিকল্প কিছু ভাবতে সহায়তা করেছে। এই কর্মহীনতা বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থায় ফাটল এনেছে। বিপিএল দলের মধ্যে ভরসার জায়গা দেখতে পেয়ে ভোটদাতারা এই দলকেই ক্ষমতায় আনার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে দেখা গেছে বিজেপি দলের বিধায়ক পর্যন্ত নির্বাচনে গো হারা হেরে গেছেন। বাঙালিদের বিদেশি নোটিশ ইস্যু করে ট্রাইবুনালের দরজায় দরজায় ঘুরে মরতে বাধ্য করার ঘটনাও ভোট বাক্সে বিরূপ প্রভাব ফেলার অন্যতম কারণ। অথচ, এমন পরিস্থিতি হতে পারে সেটা কিন্তু ওই দলের নেতারা বুঝতে পারেননি। ভোটের পর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন বিটিসিতে তাদের ফলাফল আশানুরূপ হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ভোটের আগের দুদিন প্রচার থমকে যাওয়াকে বর্ণনা করেছেন।

দ্বিতীয়ত, সারা রাজ্য জুড়ে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করে যেভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে তা মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। উচ্ছেদের ভয় বাস্তুভিটেহীন মানুষদের তাড়া করে বেরিয়েছে।  হাগ্রামা মহিলারী নির্বাচনী প্রচারের সময়ে ঘোষণা করেছিলেন বড়ভূমি এলাকায় কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে না। কেবল তাই নয় তার দল সরকার গঠন করলে ভূমিহীনদের পাট্টা দেওয়া হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছিলেন। এই ভরসা বাঙালি হিন্দু এবং মুসলিম উভয় জনগোষ্ঠীকে তার পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। হাগ্রামার এই আশ্বাস তাদের মধ্যে হতাশার ভাব দূর করে আসার আলো সঞ্চারিত করতে পেরেছে। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর হাগ্রামা তার এই দুটি প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন।

তৃতীয়ত: গোলকগঞ্জে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা আদায়ের দাবিতে চলা বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী কোচ রাজবংশী জনগোষ্ঠীর ওপর পুলিশ যে নিপীড়ন চালিয়েছে এই ঘটনার বিরূপ প্রভাব পড়েছে এই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। পুলিশের নিগ্রহের ঘটনা বড়োভূমি এলাকায় বসবাসকারী কোচ রাজবংশীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে জনমত গড়ে ওঠে। বিজেপি বিরোধী অবস্থান হিসেবে মত প্রকাশ করতে তাই তারা বিপিএফকেই ভোট দিয়েছেন। এখন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিপিএফ বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা স্থাপনের চেষ্টা করলেও এই দলের একটা নিজস্ব চিন্তাধারা বজায় থাকবে। কারণ, হাগ্রামা রাজনীতিতে যথেষ্ট বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি বহুভাষিক এবং বহু জাতিক বড়ভূমি এলাকার উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাইকে নিয়ে চলার যে মনোভাব পোষণ করেন তার প্রতিফলন ঘটবে সরকার পরিচালনায়।

চতুর্থ কারণ হচ্ছে ইউপিপিএল দলের পেছন থেকে বড়ো জনগোষ্ঠীর মানুষ অনেকাংশে সরে এসেছেন। কারণ হলো সরকার পরিচালনায় তাদের অদক্ষতা এবং জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের কর্মপদ্ধতির ত্রুটি। বিটিআর প্রশাসনে কোনো অনুমতির জন্য পাঠানো ফাইল সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কার্যালয়ে ফিরে আসতে অনেক সময় লেগেছে। মাসের পর মাস ফাইলগুলি প্রশাসনিক পরিষদের কার্যালয়ে আটকে থাকতো। এর ফলে মানুষকে সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। ভোট দাতারা বুঝতে পারেন এই দলকে ক্ষমতায় রাখলে কোনো কাজে আসবে না তাই ইউপিপিএলকে সরিয়ে পূর্বের শাসক বিপিএফকে ক্ষমতায় আনতে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বড়ো জনগোষ্ঠীর এই সিদ্ধান্ত বিটিসিতে পালাবদলের অন্যতম হাতিয়ার।

পঞ্চম: বড়োভূমির সাঁওতাল ও চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মানুষও এবার  বিপিএফের পিছনে জোট বেঁধেছেন। কারণ তাদের চোখেও অন্য কোন শক্তি বড়োভূমির জনকল্যাণের স্বার্থে যথার্থ হবে বলে মনে হয়নি। তাদেরও চিন্তার মধ্যে রয়েছে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের প্রশ্ন। অন্যান্য যেসব ছোট ছোট জনগোষ্ঠী রয়েছে সেগুলোকেও এক মঞ্চে আনতে সক্ষম হয়েছেন হাগ্রামা। ফলে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ভোটেই তার দলের বাক্সে এসে পড়েছে। এইসব জনগোষ্ঠীর বিটিসি প্রশাসনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রার্থীও দিয়েছেন হাগ্রামা। এই পদক্ষেপ ওই জনগোষ্ঠীদের মানসিক শক্তি যুগিয়েছে। তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।
কংগ্রেস দলের তৃণমূল স্তরে সংগঠন বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দু চারজন হাতেগোনা মানুষ নিয়ে কংগ্রেস বিটিসি নির্বাচনে প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিয়ে বড় ভুলই করেছে। কম আসনে প্রার্থী দিলে তাদের পক্ষে হয়তো দু একটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল। কারণ, কম আসনের মধ্যেই গোটা বিটিসির কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রচার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে খানিকটা চমক দেখাতে পারতেন। কিন্তু তা হয়নি কারণ, কংগ্রেস বরাবরই এ রাজ্যের মুসলমানদের নিজেদের ভোট ব্যাংক হিসেবে মনে করে আসছে। মুসলমানদের কাছ থেকে ভোট আদায় করলেও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কখনোই তেমন গুরুত্ব দেয়নি। শুধুমাত্র উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে মুসলমানদের সমর্থন আদায় করে এসেছে। বড়োভূমির মুসলমানরা এবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা কংগ্রেসের কেনা গোলাম নন। তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক চেতনা রয়েছে , জীবনের প্রতি মূল্যবোধ রয়েছে , সমাজের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের ভোটের ফলাফলে। মুসলমানরাও ভেবে দেখেছেন জাতীয় কোনও শক্তির বিভাজনের অংকে পা না রেখে আঞ্চলিক দল বিপিএফ এর সঙ্গে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ স্থানীয় এলাকার সমস্যা স্থানীয় উন্নয়ন এসব আঞ্চলিক শক্তির মাধ্যমেই হওয়া সম্ভব। এবারের ভোটে মুসলিমরা তাদের সম্প্রদায়ের চারজন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করে পাঠিয়ে বিটিসি প্রশাসনে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

আগের নির্বাচনে বিজেপি ইউপিপিএলের সঙ্গে জোট বেধেছিল। সেই জোটের সুবাদে ইউপিপিএল এর ভোটে ভর করে নয়টি আসনে বিজয়ের মুখ দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু এবার এককভাবে নির্বাচন লড়তে এসে দলের নিজস্ব শক্তি কতটা তা মেপে নিতে সক্ষম হয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও বড়োভূমির মানুষ এই দলের প্রতি আস্থা দেখাননি। ফলে মাত্র পাঁচটি আসন তাদের ভাগ্যে জুটেছে। ইউপিপিএল দল এককভাবে নির্বাচনে লড়ে মাত্র সাতটি  আসন মাত্র দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গতবার তাদের যে ১২টি আসন ছিল এর মধ্যে বিজেপির ভোটও সম্মিলিত ছিল। এবার এককভাবে নির্বাচন খেলে দুটি দলেই বড়োভূমিতে তাদের প্রকৃত শক্তি নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছে। এই ফলাফল থেকেই এই দুটি দল ভবিষ্যতে পথ চলার দিশা নির্ণয় করতে পারবে। তারা বুঝতে পারবে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোন দিকটায় রয়েছে এবং কি করনীয়। বিটিসির নির্বাচনে এবার বিপিএফ দল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্মিলিত শক্তি হিসেবে যে আত্মপ্রকাশ করেছে এর পেছনে রয়েছে এই দলের প্রতি সকলের অগাধ আস্থা। এই আস্থা গড়ে ওঠার কারণ হলো ইউপিপিএল দলের ব্যর্থতা এবং বিজেপি কংগ্রেস বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভাজনের রাজনীতি। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মানুষ অন্য দলের কথা চিন্তা না করে বিপিএফকে ভোট দিয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষের প্রয়োজন রাস্তাঘাট, পানীয়জল, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সুশাসন, জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা, সরকারি কাজকর্মে দ্রুততা আনা, সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ইত্যাদি। এই নির্বাচনে হিন্দু এবং মুসলমান একসঙ্গে মিলে যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এর সুদূরপ্রসারী বার্তা আগামী ২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অঙ্গনে পৌঁছে যাবে। হিন্দু এবং মুসলমান ভেদাভেদ ভুলে যদি বিধানসভা নির্বাচনের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে অসমের রাজনৈতিক বাতাবরণে  অন্যরকম প্রভাব পড়তে পারে।

রাজ্যের শাসক বিজেপি দল মুখে সব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কথা বললেও তাদের গোপন এজেন্ডায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষিত করে রাখার যে প্রবণতা এর পরিবর্তন না করলে আগামী নির্বাচনে চরম মূল্য চোকাতে হতে পারে। চাকরি বাকরি থেকে বাঙালিদের বঞ্চিত করে রাখা, কোচ রাজবংশীদের ন্যায্য দাবির প্রতি অনীহা প্রকাশ করা, তাদের উপর দমনমূলক নীতি গ্রহণ করা , ধর্মের ভিত্তিতে ভোটদাতাদের মধ্যে বিভাজন আনা এসব ভোগদা তাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র প্রচার সর্বস্ব রাজনীতি করে রাজ্যকেও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এটা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। কারণ সব জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে উঠেছে। বিটিসি নির্বাচনে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল হিন্দু মুসলমান একজোট হতে পেরেছেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই একজোট হওয়ার মনোভাব যদি বজায় থাকে তাহলে অনেক আসনে এর ভিন্ন ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা সম্ভব হবে। এটা শাসক বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেস সহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলগুলির নেতৃত্ব মুখে শিকার না করলেও প্রকৃত অবস্থা কিন্তু  তারা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছেন। আরেকটি বিষয়ে উল্লেখ করার মতো হলো, এখন ভোটদাতারা উল্টোপাল্টা ভোট দিয়ে তাদের শক্তি অপচয় করতে চান না। সঠিক জায়গায় ভোট দিয়ে তাদের বিচক্ষণতা প্রমাণ করতে ভোটদাতারা যথেষ্ট সক্রিয়। অন্তত পিটিসির এবারকার নির্বাচন এটাই প্রতীয়মান করিয়েছে। কাজেই বিধানসভা নির্বাচনেও ভোটদাতারা যদি বিচক্ষণতার সঙ্গে তাদের অধিকার প্রয়োগ করেন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Spread the News
error: Content is protected !!