ভয়াবহ চিত্র মধ্যপ্রদেশে, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের বরাদ্দ মাত্র ১২ টাকা

২৩ অক্টোবর : শিশুপুষ্টি নিয়ে ভয়াবহ চিত্র মধ্যপ্রদেশে। এক শিশুমৃত্যুর পেছনের কারণ নগ্ন করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের দারিদ্রের বেহাল দশাকে। সরকারি হাসপাতালে অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে মাত্র আড়াই কেজির হুসেন রেজার। মাত্র চার মাস আগে পৃথিবীর আলো দেখেছিল হুসেন। কিন্তু চারদিন আগে শনিবার, যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় তার শারীরিক অবস্থা দেখে চমকে যান কর্তব্যরত চিকিৎসক। কঙ্কালসার দেহ, হাড়ের ওপর শুধু চামড়ার পরত, আধখোলা চোখ আর বিবর্ণ ঠোঁট পরিষ্কার ফুটিয়ে তুলেছিল সরকারি দাবি আর বাস্তব চিত্রের ফারাক। পিকিউ (PICU)-তে টানা চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছিল হুসেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে জেলা হাসপাতালে সে মারা যায়। মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি।

অথচ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের গালভরা দাবি, অসংখ্য পুষ্টি প্রকল্প, কোটি কোটি টাকার বাজেট, শিশুদের সুরক্ষায় গড়া অসংখ্য পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁর সরকার। আবার সেই রাজ্যের রিপোর্টই বলছে একজন সরকারি আমলা একটি বৈঠকের জন্য ভাজাভুজি ও শুকনো ফলেই খরচ করেন হাজার হাজার টাকা। অন্যদিকে, রাজ্যের অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য রাজ্য সরকারের বরাদ্দ মাত্র মাত্র ১২ টাকা। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী নির্মলা ভুরিয়াও মেনে নিয়েছেন অপুষ্টি প্রতিরোধে তেমন কোনও বরাদ্দ নেই। আমরা কেন্দ্রের কাছে আরও অর্থ সাহায্যের আর্জি জানিয়েছি। অন্য রাজ্যগুলিও অপুষ্টি দূরীকরণে অনুদান বৃদ্ধির আবেদন করেছে বলে জানান মন্ত্রী।

চিকিৎসকদের মতে, হুসেনের ওজন ছিল মাত্র আড়াই কিলোগ্রাম, যেখানে ওই বয়সে সুস্থ শিশুর ওজন অন্তত পাঁচ কিলোগ্রাম হওয়া উচিত। এতটাই দুর্বল ছিল সে যে, কেঁদে নিজের কষ্ট প্রকাশ করার মতো শক্তিটুকুও শরীরে অবশিষ্ট ছিল না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হুসেন জন্মের পর থেকে একটিও টিকা পায়নি। ফলে তার দুর্বল শরীর আরও ঝুঁকির মুখে পড়ে। জানা গিয়েছে, গত শনিবার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন হুসেনের মা আসমা বানো। শিশু চিকিৎসক সন্দীপ দ্বিবেদী প্রথমবার শিশুটিকে পরীক্ষা করেই ঘোষণা করেন, ‘গুরুতর অপুষ্টিগ্রস্ত শিশু’।

প্রথমে পাঠানো হয় নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে, পরে স্থানান্তর করা হয় পিকিউ-তে। কিন্তু চার দিনের লড়াই শেষেও বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। হুসেনের মৃত্যুর পর মেডিক্যাল অফিসার এস.পি. শ্রীবাস্তব, হেলথ ওয়ার্কার লক্ষ্মী রাওয়াত ও আশা কর্মী উর্মিলা সৎনামির বিরুদ্ধে নোটিস জারি হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা সময়মতো শিশুর অবস্থার খবর রাখেননি, হাই রিস্ক কেস হিসেবে শনাক্তও করেননি।

তবে শুধু তিন কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকার গা ঝাড়া দিতে চাইছে তা কিন্তু প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছরের আগস্ট মাসে শিবপুরিতে ১৫ মাস বয়সি দিব্যাংশি নামে এক কন্যাশিশু মারা যায়, তার ওজন ছিল মাত্র ৩.৭ কিলোগ্রাম। তার আগে, শেওপুরে মৃত্যু হয় দেড় বছরের রাধিকার, ওজন ছিল মাত্র ২.৫ কিলোগ্রাম- যেখানে সেই বয়সে শিশুর গড় ওজন হওয়া উচিত ১০ থেকে ১১.৫ কিলোগ্রাম। জুলাইয়েও ভিন্ধ জেলায় একইরকম মৃত্যু হয়েছিল, পরিবারের দাবি ছিল–অপুষ্টিই কারণ।

রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা সরকারি তথ্য বলছে, বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে এক মিলিয়নেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, তার মধ্যে ১.৩৬ লক্ষ শিশুর অবস্থা ‘গুরুতর বিপজ্জনক’ পর্যায়ে।২০২০ থেকে জুন ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন ব্লকগুলির নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভর্তি হয়েছে ৮৫,৩৩০ শিশু। প্রতিবছর ভর্তি সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০২০-২১ সালে ১১,৫৬৬ থেকে ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ২০,৭৪১।

২০২৫ সালের এপ্রিলে গোটা দেশের তুলনায় মধ্যপ্রদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি অপুষ্টিজনিত শিশুর হার ছিল ৭.৭৯ শতাংশ যেখানে গোটা ভারতে ছিল ৫.৪০ শতাংশ। আরও উদ্বেগজনক, রাজ্যের ৫৫ জেলার মধ্যে ৪৫টিই কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী ‘রেড জোন’-এ, যেখানে ২০ শতাংশেরও বেশি শিশু বয়স অনুযায়ী অতি কম ওজনের।
খবর : দৈনিক স্টেটসম্যান বাংলা।

Spread the News
error: Content is protected !!