জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি : শিলচরে বিক্ষোভ বিভিন্ন সংগঠনের

বরাক তরঙ্গ, ৮ জুলাই : নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক, যুব, গ্রাহক সংগঠনের প্রতিনিধি ও নাগরিকেরা শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সোমবার বিক্ষোভের শুরুতে আন্দোলনকারীরা মুল্যবৃদ্ধির জন্য জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারকে দায়ী করে দীর্ঘ সময় স্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত বক্তব্যে বলেন, জেলার প্রতিটি বাজারে শাক-সব্জি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এমনিতেই এবার জেলাবাসী প্রায় একমাসের মধ্যে দু’বার বানভাসি হয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে দিনযাপন করছেন। বন্যা পরিস্থিতিতে কার্যতঃ রোজিরোজগারহীন সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবনধারণ করা অত্যন্ত কষ্টকর। গত সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে জীবনদায়ী ওষুধ, বিদ্যুৎ মাশুল, জলকর, পুরকর, মোবাইল ফোনের রিচার্জ ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধি করে মানুষকে নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ এর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছে। তিনি বলেন, তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট রাজের’ বেআইনি কাজের ফল ভোগ করছে জেলার জনগণ।
বিক্ষোভ শেষে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিকদের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন অনুযায়ী কালোবাজারি, মুনাফাখোর একাংশ অসাধু ব্যাবসায়ী ও সিন্ডিকেট রাজের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, জেলায় মজুদজাত সামগ্রী যথাক্রমে আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির স্টক যাচাই করে সেগুলোর কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারীদের চক্রান্ত ভেস্তে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলোর মূল্য ধার্য করে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা, কাঁচা সামগ্রী যথাক্রমে শাক, সব্জি, ফল, মাছ, মাংস ইত্যাদির বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের বেআইনি কাজকর্ম রোধ করতে সরাসরি সে সব জিনিস কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং জনগণের সুবিধার্থে প্রতিটি বাজারে ও গণমাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধার্য করে তালিকা আকারে টাঙ্গিয়ে রাখার দাবিতে একটি স্মারকপত্র জেলাশাসকের কাছে প্রদান করা হয়।

মিছিল করে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশ থেকে জেলাশাসক কার্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর আগে ফোরাম ফর স্যোশাল হারমনির পক্ষ থেকে অরিন্দম দেব বলেন, মানুষের ধৈর্য্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে। শাক, সব্জির দাম সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে। তবুও জেলা প্রশাসন নির্বিকার। তাদের অস্তিত্ব রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে না। বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন সিআরপিসি-র সাধন পুরকায়স্থ, ফোরাম ফর স্যোশাল হারমনির অরূপ বৈশ্য, এআইসিসিটিইউ-র অসীম নাথ, স্বর্ণালী চৌধুরী, এআইডিওয়াইও-র বিজিত কুমার সিনহা ও পরিতোষ ভট্টাচার্য, অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন এর রঞ্জিত চৌধুরী, চাম্পালাল দাস, জয় দাসগুপ্ত, গৌরাঙ্গ নাথ, হানিফ বড়ভূইয়া, ইউনিস আলি চৌধুরী, নন্দদুলাল সাহা, দীপঙ্কর চন্দ, হিউম্যান রাইটস হেলফ অ্যাসোসিয়েশন এর পার্থপ্রতিম ধর, খাদেজা বেগম লস্কর, টিইউসিসি এর পার্থসারথী আচার্য, রূমা দেবনাথ, সামসুল ইসলাম, সৌরভ রায় সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আন্দোলনকারীরা প্রথমে জেলাশাসকের কার্যালয়ের গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।আন্দোলনকারীদের সাপ্লাই বিভাগের দায়িত্ব থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক খালেদা সুলতানার সঙ্গে দেখা করতে উন্নয়ন ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাঁকে পাওয়া না গেলে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এরপর তারা ফুড অ্যান্ড সিভিল সাপ্লাই এর সুপারইনটেনডেন্ট এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার কার্যালয়ে পৌঁছান। কিন্তু তিনিও তখন কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। আন্দোলনকারীরা তখন যে করেই হোক কার্যালয়ে তাকে উপস্থিত হতে অধস্তন কর্মচারীদের বারবার অনুরোধ করেন।
পরবর্তীতে সেই কার্যালয়ের জনৈক অধস্তন কর্মচারী ফোন করে সুপারইনটেনডেন্টকে আসতে অনুরোধ করেন। সুপারইনটেন্ডডেন্ট সেখানে কিছুক্ষণ পর পৌঁছালে তাঁর কক্ষে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে আইনজীবী আলি রেজা ওসমানি, হিল্লোল ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ গুপ্ত, শ্রমিক নেতা রফিক আহমেদ, হরিদাস দত্ত, স্নিগ্ধা নাথ, অরিন্দম দেব প্রমুখ তাঁকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে একের পর এক প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর না দিয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক তাঁর স্বাক্ষরিত একটি মূল্যতালিকা আন্দোলনকারীদের হাতে তুলে দেন।
মূল্যতালিকা দেখে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছায়। তাঁরা বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনের পাঠানো তালিকায় সরকারি আধিকারিক কীভাবে সিলমোহর ও স্বাক্ষর দিয়ে মূল্য তালিকা প্রকাশ করছেন। আন্দোলনকারীরা বলেন আলু ও পেঁয়াজ বছরের যে সময় কোল্ড স্টোরেজে মজুদ করা হয় তখন সেগুলো কত দামে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে তার সঙ্গে সেগুলোর বহন ও মজুদ করার খরচ যোগ করে মূল্যতালিকা তৈরি করা উচিত। সাপ্লাই বিভাগের কাছে কোল্ড স্টোরেজে মজুদ থাকা আলু, পেঁয়াজের পরিমাণ ও ক্রয়মূল্য চাইলে তাদের কাছে সেগুলো নেই বলে জানায়। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সাপ্লাই বিভাগ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের যোগসাজশে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। দীর্ঘক্ষণ বাদানুবাদ চলার পর আগামীকাল আন্দোলনকারীদের সাথে এই ইস্যুতে একটি বৈঠক জেলা সাপ্লাই বিভাগের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হরিদাস দত্ত বলেন, বৈঠকে যদি তাদের দাবি মানা না হয় তাহলে আগামীতে আরো তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।