কাটিগড়া সহকারী ভু-বাসন অফিসের ঘুষকাণ্ডে জড়িত দু’জন আটক

বরাক তরঙ্গ, ৬ আগস্ট : গ্রেফতার হলেন সাহাদত হোসেন ও মনোজ অধিকারী। কাটিগড়া সহকারী ভু-বাসন অফিসের ঘুষকাণ্ডে জড়িত এই দু’জনকে সোমবার ডিসি অফিসেই আটক করে পুলিশ। বস্তুত, অভিযুক্ত দু’জনকে নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দিলেন জেলা আয়ুক্ত স্বয়ং! রাতে কাটিগড়া পুলিশ গিয়ে এঁদেরকে থানায় গিয়ে আসে। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় সাহাদত ও মনোজকে। সাহাদত হোসেন ও মনোজ অধিকারী দু’জনই কাটিগড়া সহকারী ভু-বাসন অফিসের কর্মচারী। সাহাদত লট পাটোয়ারী আর মনোজ সুপারভাইজার কানুনগো। দু’জনই গত কয়েকদিন ধরে ভাইরাল নিজস্ব কর্মকুশলতায়! দু’জনকেই ঘুষের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল পৃথক পৃথক দুই ভিডিও-য়। প্রথম ভিডিও ভাইরাল হয় ২৫ জুলাই। যেখানে পাটোয়ারী সাহাদত হোসেনকে ঘুষের টাকা আদান-প্রদান করতে দেখেছিলেন কাটিগড়া তথা বরাক উপত্যকার মানুষ। ওই ভিডিও-তে সাহাদতবাবু পর পর দু’জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিলেন সদর্পে। করছিলেন দর-দামও। একজনের নিকট থেকে অফিসের ভেতর অন্যজনের কাছ থেকে পাশ্ববর্তী গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিচ্ছিলেন টাকা। এনিয়ে শুরু হয় হল্লা। কী করে একজন পাটোয়ারী এভাবে বুক উঁচিয়ে টাকা গ্রহন করতে পারেন, এপ্রশ্নও অনেকে তুলেছিলেন।

সামাজিক মাধ্যমে তীব্র গতি পাওয়া ওই ভিডিও যখন তুঙ্গে, তখন অন্য দুই ভিডিও চোখে পড়ে অনেকের। যেখানে সাহাদতকে টাকা প্রদানকারী দু’জন ভাইরাল ভিডিও-র স্বপক্ষে সাফাই দিচ্ছিলেন। তবুও সাহাদতের কুকান্ড চাপা পড়েনি। বরং আস্ত কাটিগড়া থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গণক্ষোভ আছড়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। একের পর এক ব্যক্তি সাহাদতের ‘শিকার’ হয়েছিলেন বলে স্বীকার করতে থাকেন। এরইমধ্যে অনেকে সহকারী ভু-বাসন আধিকারিক তথা সার্কল অফিসারের দ্বারস্থ হয়ে সাহাদতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি রাখেন। জমা পড়ে কয়েকটি স্মারকপত্রও। একসময় সাহাদতকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন সহকারী ভু-বাসন আধিকারিক। এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিপোর্ট করেন জেলা আয়ুক্তের দরবারে।

কাটিগড়া সহকারী ভু-বাসন অফিসের ঘুষকাণ্ডে জড়িত দু’জন আটক

এদিকে, সাহাদতের এই কীর্তি যখন কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসছিল, তখন সামনে আসে আরেক ভিডিও। যেখানে সেই একই অফিসের সুপারভাইজার কানুনগো মনোজ অধিকারীকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে পয়লা আগষ্ট। ভিডিও-তে দেখা যায়, নিজের চেম্বারে বসেই টাকা নিচ্ছেন মনোজবাবু। সেই একই কায়দায়, একই দাপটে। একেবারে সাহাদতের কপি-পেস্ট! ওই ভিডিওটিও ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। নেটিজেনরা এনিয়ে সরব হন আরেকবার। কাটিগড়ার আম মানুষও সহকারী ভু-বাসন অফিসের এই নগ্ন চিত্র নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ওই অফিসে টাকা ছাড়া কোনও কাজ হয় না, এমন অভিযোগ করে ক্ষুব্ধ মানুষ বলেন, নুন্যতম কোনও কাজে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। সাহাদত ও মনোজের ভিডিও এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে যে যথেষ্ট, তা বিলক্ষণ অনুভব করতে পারেন সহকারী ভু-বাসন আধিকারিক ড. রবার্ট টৌলর। ফলে দ্বিতীয় ভিডিও ভাইরালের পর মনোজ অধিকারী পরদিন বিন্দাস মুডে অফিস করলেও বসে থাকেননি এএসও। ওই ভিডিও-রও সবিশেষ জানান জেলাশাসকে।

Author

Spread the News