করিমগঞ্জে দু’দিনব্যাপী সার্ক শীর্ষ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মহাসম্মেলন সম্পন্ন
মোহাম্মদ জনি, করিমগঞ্জ।
বরাক তরঙ্গ, ৫ নভেম্বর : ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দু’দিনব্যাপী ঐতিহাসিক সার্ক শীর্ষ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মহাসম্মেলন সম্পন্ন হল। ভারত-বাংলা সীমান্ত জেলা করিমগঞ্জ শহরের বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতি মিলনায়তনে দেশ বিদেশের একঝাঁক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সহ বিভিন্ন গুণীজনদের উপস্থিতিতে সমাপ্ত হয়। ২ নভেম্বর প্রদীপ প্রজ্জলন করে অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কবি পশ্চিমবঙ্গের হিমেন্দু দাস। এরপর একে একে তিনটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেন তিনজন ধর্মগুরু। গীতা পাঠ করেন কলকাতার কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য, কোরান পাঠ করেন নিউ জলপাইগুড়ির মওলানা মোঃ শহিদুল ইসলাম ও ত্রিপিটক পাঠ করেন আগরতলার কৃপামোহন চাকমা।
সভায় অতিথিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুপদ দাস। সভায় সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মী পাঠক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন (আইএইচআরসি) ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক চেয়ারম্যান আনন্দ মহল সরকার। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা সিটি কলেজ উপাচার্য ড. মুহিতোষ গায়েন।
এছাড়া অন্যান্য অতিথিবৃন্দর মধ্যে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন করিমগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি মিহির দেবনাথ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ শ্যামাপদ দে, দীপঙ্কর পোড়েল, ড. সর্বজিত যশ, ড. অর্ণব দত্ত, পৌষালি দেবনাথ, ইলিয়াস ঘরামী, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপঙ্কর পোড়েল, তরুণকান্তি মণ্ডল, সাংবাদিক প্রদীপ্ত পুরকায়স্থ, হিমেন্দু দাস প্রমুখ। আবৃত্তি পাঠ করেন প্রায় শতাধিক কবি সাহিত্যিক।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দদেরকে অসমের ঐতিহ্যবাহী গামছা, সরাই, ঝাঁপি, বিভিন্ন পদক এবং স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছে। বীর লাচিত বরফুকন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও শহিদ কমলা ভট্টাচার্য, মায়ারানি দেবী স্মারক সম্মাননা সহ বহু পুরস্কার প্রদান করা হয়। দেশ বিদেশের ২০ জন গুণীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
সন্ধ্যায় শুরু হয় মনোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গীত অনুষ্ঠানে কলকাতা, আগরতলা, অসম সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক বিশ্ব মানব ধর্ম বিকাশ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মী সঙ্গীত শিল্পী সমাজসেবী নীহাররঞ্জন দেবনাথের একক কাব্যগ্রন্থ ‘মহারাজার কলমে’ বইটির মোড়ক উম্মোচন করা হয়। চারটি দেশের প্রায় ১৪২ জন কবির প্রায় দেড়শোটি কবিতার যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘সপ্তর্ষি এর মোড়ক উম্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল ভাষাভাষী মানুষের মঙ্গল কামনা করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করেন। রাত আটটায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। ৪ নভেম্বর বিশ্ব মানবধর্ম বিকাশ পরিষদের চারটি দেশ ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়। সেইসাথে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটসের অসম রাজ্য ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নীহাররঞ্জন দেবনাথ।
৪ নভেম্বর দিনব্যাপী চলে ঐক্য শান্তি সংহতি বিশ্ব মানবপ্রেম ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বেধে মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানানো হয়। বিশ্ব মানবধর্ম বিকাশ পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির চেয়ারম্যান নীহার রঞ্জন দেবনাথের অসাধারণ এই উদ্যোগকে দেশ বিদেশের গুণীজনেরা সাধুবাদ জানান। ৩ নভেম্বর ছিল মূল অনুষ্ঠান। এ দিন সকাল দশটায় বিশ্ব মানব ধর্ম বিকাশ পরিষদের পতাকা উত্তোলন করেন পরিষদের চেয়ারম্যান, মহারাজাধিরাজ খেতাবপ্রাপ্ত কবি-সাংবাদিক নীহাররঞ্জন দেবনাথ সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, শীর্ষ সাহিত্য ও সংস্কৃতিক মহাসম্মেলনে অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষা, মেঘালয়, দিল্লি, কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড সহ পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, সঙ্গীতশিল্পী সমাজসেবী ও বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন।