মণিপুরে দাঙ্গা ও গণহত্যা রুখতে ব্যর্থ সরকার, ধিক্কার সিটুর
বরাক তরঙ্গ, ১৭ নভেম্বর : কোন নৃশংসতা? পাশবিক বললে পশুরা লজ্জা পাবে। অসহায় নিরপরাধ দুগ্ধপোষ্য শিশুকেও খুন হতে হয়। জাতীগত বিদ্বেষ কোন স্তরে পৌঁছলে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটে তা উপলব্ধি করার সময় কি এখনও আসেনি? সংবাদপত্রে মণিপুরের অপহৃত ব্যক্তিদের ও শিশুদের ছবিগুলি মনে হলে তাদের খুন হওয়ার খবর হৃদয়কে এতটাই মোচড় দিচ্ছে, আলোড়িত করছে যে এর প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দীর্ঘ দেড় বছর ধরে মণিপুরের জাতি দাঙ্গা দেশের সমস্ত নজির অতিক্রম করেছে। অথচ আমরা প্রকৃত অর্থে নির্বিকার। সমস্ত গণ মাধ্যমে নিয়মিত মণিপুর রাজ্যের দাঙ্গার বীভৎসতা প্রকাশ পাচ্ছে, অথচ মণিপুর ছাড়া অন্য কোথাও এই ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সিটুর কাছাড় জেলা সভাপতি সুপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, মণিপুরের একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আছে, এই সরকার এতটাই অপদার্থ যে সমস্যা সমাধানের কোনও সদর্থক উদ্যোগই নেই। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের নিরুত্তাপ অবস্থান এই জাতি দাঙ্গা সম্বন্ধে ওদের নীতিগত অবস্থান ও উদ্যেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে। এও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর ভাই মোদি একবারের জন্য মণিপুর যাবার প্রয়োজনবোধ করেনি। সেখানকার মানুষের জীবন জীবিকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে সব দায়িত্ব সৈন্য বাহিনীর হাতে অর্পণ করে নিজ দায়িত্ব মুক্ত হয়েছে সরকার। কটাক্ষ করে বলেন, তিনিই আবার বিশ্ব গুরু হওয়ার আকাঙ্খায় রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধ নিরসনে অথবা ইজরায়েল, লেবানন শান্তি প্রচেষ্টার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন।
মণিপুরে যারা দাঙ্গা বিধ্বস্ত হয়েছেন, যারা নিহত হয়েছেন, যারা গৃহহারা হয়ে শরণার্থী হয়েছেন এবং সেখানেও আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই নির্যাতিত মানুষেরা সবাই সাধারণ শ্রমিক অথবা কৃষক শ্রেনীর। ওদের মধ্যে বিভেদ ও দাঙ্গা ছড়িয়ে কাদের স্বার্থ সিদ্ধি হচ্ছে সহজেই বোঝা যায়।
আমরা শ্রমিক শ্রেনীর সংগঠন সিটু এই জাতি দাঙ্গা ও গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। মণিপুরে রাজ্য সরকারের অপদার্থতার বিরুদ্ধে ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাই। সিটু দাবি জানায়, অবিলম্বে দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, শরণার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করা ওদের বিধস্ত গৃহ পুনর্নির্মাণ করে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং রাজ্যের সমস্ত জাতি জনজাতি জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি সম্প্রতি পুনঃস্থাপন করা। সেই সঙ্গে মণিপুর তথা পার্শ্ববর্তী এলাকায় জনগণের প্রতি আবেদন কোনো গুজব অথবা উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে নিজেদের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষা করে দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।