পৃথক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদের দাবি তুলল বিডিএফ
উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাক পিছিয়ে আছে তা উপলব্ধি করতে পারায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রদীপের
বরাক তরঙ্গ, ৬ জানুয়ারি : বরাক উপত্যকার উন্নয়নের জন্য পৃথক বিভাগ তৈরির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এই বিভাগের অর্থ বরাদ্দ কিভাবে হবে তা নিয়ে এবার স্পষ্টীকরণ চাইল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। পাশাপাশি প্রকৃত উন্নয়নের স্বার্থে বরাকের জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক পরিষদ স্থাপনের দাবি জানালেন বিডিএফ কর্মকর্তারা।
বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভা শেষে সংবাদ মাধ্যমের কাছে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকা যে পিছিয়ে আছে তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে তিনি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু শুধু বিভাগ তৈরি করেই সমস্যার সমাধান হবে না। এই বিভাগের কাজ কি হবে এবং উন্নয়ন মূলক কাজকর্মের জন্য এই বিভাগকে কিভাবে এবং কতটা অর্থ বরাদ্দ করা হবে তার উপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করছে। তিনি বলেন, এই বিষয়গুলি এখনো স্পষ্ট নয়। তাই এসব ব্যাপারে অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টীকরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রদীপ দত্তরায় আরও বলেন, একটি দেশ বা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের সমানুপাতিক উন্নয়ন না হলে পুরো প্রক্রিয়ায় তাঁর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই পৃথক ডোনার মন্ত্রক তৈরি করা হয়েছিল। এবং এটি অনস্বীকার্য যে এই মন্ত্রক উত্তর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে কারণ এই মন্ত্রকের জন্য পৃথক ভাবে অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। একই ভাবে বরাক উপত্যকার উন্নয়ন একমাত্র সম্ভব যদি এটিকে প্রাথমিকতা দিয়ে বরাক উন্নয়ন বিভাগের জন্য পৃথক ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তিনি বলেন যে শুধু রাজ্য সরকার নয় এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই বিভাগকে পৃথক ভাবে প্রকল্প ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দের এদিন দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন, এই পরিপ্রেক্ষিতে বরাক উপত্যকার জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদ স্থাপন করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে তবে তা অবশ্যই সম্ভব। এরজন্য শুধু সংসদে একটি প্রস্তাব পাস করাতে হবে। তিনি বলেন, পৃথক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদ হলে তাতে বরাক উপত্যকার সব জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং তা সব জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সুনিশ্চিত করবে। এবং এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের পশ্চাৎপদতার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে ফলে উন্নয়ন গতিশীল হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন যে বর্তমানে বরাকের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য মণিপুরে যেভাবে অস্থিরতা চলছে তাঁতে দেশের নিরাপত্তার জন্য বরাকের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই অবিলম্বে এই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে নজর দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্যকর্তব্য বলে তিনি মনে করেন।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে কোন অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সেই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন সূচিত করে। বরাকের প্রকৃত উন্নয়ন হতে গেলে এখানকার কৃষি, শিল্প ও সেবা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং উদ্যোগ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন বরাকের বৃহৎ সংখ্যক বেকারদের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে কখনোই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এই নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন পৃথক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদ তৈরি হলে এই ব্যাপরটি তরান্বিত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। জয়দীপ বলেন, বরাকের প্রতি বঞ্চনা, বৈষম্য এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বরাকের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার রয়েছেন। বরাকের উন্নয়নে পৃথক বিভাগ গঠনের মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য তাই তাকে তিনি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। একই সাথে এবার তাকে বরাকের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিষদ গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা বিডিএফ এর পক্ষ থেকে এই মর্মে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে তাঁরা স্মারকলিপি পাঠাবেন এবং অনতিবিলম্বে বিডিএফ এর এক প্রতিনিধিল দিল্লিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আধিকারিকদের কাছে এই দাবি তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে এটি বরাকের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপ হবে বলেও এদিন জানিয়েছেন তিনি।