মেডিক্যালের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে দুর্নীতি, বহিষ্কার ছয় কর্মী
বরাক তরঙ্গ, ২১ জুলাই : শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের অধীন সেন্ট্রাল কম্পোজিট ল্যাবরেটরি (সিসিএল) বা কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের ছয় কর্মীকে বহিষ্কার করা হল। দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ তদন্তক্রমে সিসিএল-এর ছয় কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ সূত্রে জানা যায়, বহিষ্কৃতরা হলেন মুজিবুর রহমান মাঝারভূইয়া, পৌলং রংমাই, ব্রহ্মানন্দ কুর্মী, সৌমেন ঘোষ, আজিজ শেখ ও রাসু চন্দ্র দাস-এই ছয় কর্মীকে। এই ছয়জনকে নিযুক্ত করা হয়েছিল ঠিকাভিত্তিতে। এরা কাজ করতেন টেকনিশিয়ান হিসেবে।
ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদককে সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ দেবকুমার চক্রবর্তী জানান, সিসিএল-এ দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়াকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ডাঃ ঠাকুরিয়া তদন্ত চালিয়ে ছয় জনকে সনাক্ত করার পর এদের বহিষ্কার করা হয়। সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ চক্রবর্তী জানান, ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া কম্পিউটার এবং রেজিস্ট্রিতে নথিভুক্ত তথ্য খতিয়ে দেখে এই দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছেন। তবে তিনি ২-৩ মাসের হিসেবপত্র খতিয়ে দেখে যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে দেখা গেছে এই সময়কালেই বাইরের রোগীদের প্রচুর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
কিভাবে করা হয়ে থাকে এই দুর্নীতি। মেডিক্যালের এক সূত্র জানান, সিসিএল-এ পরীক্ষার নামে দুর্নীতি চলছিল অনেকদিন ধরেই। যত্রতত্র কোনও পরিকাঠামো বিনেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে সংগৃহীত নমুনা গোপন বোঝাপড়ার মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় মেডিক্যালের সিসিএল বা কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে। মূলত যেসব পরীক্ষার ‘ফি’ খুব বেশি, পাঠানো হয় সেসব পরীক্ষার জন্য সংগৃহীত নমুনাই। আর মেডিক্যালের খরচে মেডিক্যালের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর এর বিনিময়ে বেসরকারি ল্যাবে আদায়কৃত ‘ফি’ করে নেওয়া হয় ভাগ বাটোয়ারা। এতে মেডিক্যালের আর্থিক ক্ষতি হলেও পকেট ক্রমেই ফুলেফেঁপে উঠছিল সিসিএল-এর একাংশ কর্মী ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বেসরকারি ল্যাবগুলোর মালিকপক্ষের। এই দুর্নীতি রুখতে বেশ কিছুদিন ধরেই চালু করা হয়েছে বারকোড। মেডিক্যালের প্রতিজন রোগীকে পৃথক পৃথক বারকোড দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। যাতে করে এর বাইরে আর কারও নমুনা সিসিএল-এ পরীক্ষা করা না যায়। কিন্তু কিছুদিন অতিক্রান্ত হতে না হতেই এই ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দেওয়া শুরু হয়ে যায়। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে বারকোড মেশিন অকেজো করে কখনওবা একজন রোগীর বারকোড ব্যবহার করে তারই সঙ্গে বাইরের ল্যাবরেটরিতে সংগৃহীত নমুনাও পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। আর এভাবে সিসিএল-এর একাংশ কর্মী ও বাইরের একাংশ ল্যাবরেটরি মালিকপক্ষের সম্মিলিত চক্র প্রতিমাসে মেডিক্যালের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে পকেটস্থ করছিল লক্ষ লক্ষ টাকা।