প্ৰিপেড মিটারের প্রতিবাদে শ্রীভূমি জেলায় কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের পথসভা

প্ৰিপেড মিটারের প্রতিবাদে শ্রীভূমি জেলায় কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের পথসভা

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ৩০ ডিসেম্বর : প্ৰিপেড স্মাৰ্ট মিটার অত্যন্ত কৌশলে ও ছলচাতুরি স্থাপনের প্রতিবাদে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের শ্রীভূমি জেলা কমিটি কয়েক দিন ধরেই জেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভার আয়োজন করে চলেছে। ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর করিমগঞ্জের ভাটুকি বাজার, চৌধুরী বাজার, ঘোড়ামারা চৌরঙ্গী বাজার ও চরগগোলা বাজার ও বাখরশাল এলাকায় স্থানীয় ব‍্যবসায়ী ও পথচারীদের উপস্থিতিতে আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন কমিটির  সভাপতি সুনীতরঞ্জন দত্ত, পরিমল চক্রবর্তী, গোপালচন্দ্র পাল, তুতীউর রহমান ও সুজিৎকুমার পাল।

বক্তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বলেন, রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়া ঘরে ঘরে স্মাৰ্ট মিটার বসানোকে কেন্দ্ৰ করে গোটা রাজ্য উত্তাল হয়ে উঠেছে। সরকার একদিকে মিটার স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে জনসাধারণ এই মিটার বন্ধের দাবীতে স্বত:স্ফুৰ্তভাবে রাজপথে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।স্মাৰ্ট মিটার বন্ধের দাবিতে জনগণের এই ন্যায্য দাবি মেনে সরকারের অবিলম্বে গ্রাহকদের স্বাৰ্থের পরিপন্থী স্মাৰ্ট মিটার বাতিল করা উচিত।
বক্তারা আরও বলেন, বৰ্তমানের ডিজিটেল মিটার বিদ্যুৎ পরিমাপে যখন একশ শতাংশ নির্ভূল তখন রাজকোষের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে স্মাৰ্ট মিটার প্রতিস্থাপনের কোনো প্ৰয়োজনই নেই। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে রাজকোষের টাকা অপচয় করে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার অন্যান্য বিষয় উন্নয়নের জন্য খরচ করুক। বৃহৎ কৰ্পোরেট গোষ্ঠীর স্বাৰ্থে সরকার জোর করে এভাবে স্মাৰ্ট মিটার স্থাপন করতে চাইছে। সরকারের জনবিরোধী স্মাৰ্ট মিটার প্রতিস্থাপনের প্রকল্প বাতিল এবং অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ব্যবস্থা রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। গণ আন্দোলনকে ব্যাপক রূপ দিতে  অল আসাম কোনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা কমিটির সভাপতি সুনীতরঞ্জন দত্ত বলেন প্রথমত স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের মূল উদ্দেশ্য বিল প্রদানের ব্যবস্থাকে প্রিপেইডে পরিবর্তন করা অর্থাৎ বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেই অগ্রিম টাকা রিচার্জ করা। দ্বিতীয়ত স্মার্ট মিটার ব্যবস্থায় কোন গ্রাহক বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে রিচার্জ করতে না পারলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার বিদ্যুৎ সংযোগ সাথে সাথেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। অথচ বিদ্যুৎ আইনে বলা হয়েছে যে কোন গ্রাহক বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে না পারলে তাকে নোটিশ প্রদান করতে হবে এবং কেউ একসাথে পুরো বিল প্রদান করতে না পারলে তার কাছ থেকে ৩/৪ কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ দিতে হবে। অথচ স্মার্ট মিটার চালুর পর সেটার সুযোগ আর থাকছে না। তৃতীয়ত বিদ্যুতের বিল সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে নিকটবর্তী এপিডিসিএল কার্যালয়ে গিয়ে তা নিস্পত্তির আর সুযোগ থাকবে না। ইন্টারনেট মারফত অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা থাকলেও তা নিস্পত্তির কোন নির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে না। চতুর্থত সাধারণ গ্রাহকদের প্রতিদিন মোবাইল ফোনে দেখতে হবে কত টাকা কেটেছে। যাদের মোবাইল ফোন নেই বা নির্দিষ্ট ‘এপ’ খুলে দেখতে পারেন না তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আতঙ্ক নিয়ে জীবন কাটাতে হবে। স্মার্ট মিটার বসানোর পর গোটা রাজ্যের জনগণ অভিযোগ করছেন যে তাদের পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি বিল দিতে হচ্ছে। এই অভিযোগ দেশের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে সেখানেও উত্থাপিত হচ্ছে।প্রিপেড স্মার্ট মিটারের মত একটি লুন্ঠনের যন্ত্র প্রতিস্থাপন করে কর্পোরেটদের অধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

প্ৰিপেড মিটারের প্রতিবাদে শ্রীভূমি জেলায় কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের পথসভা

এই মিটার সম্পূর্ণ চালু হলে মিটার রিডার, বিল ক্লার্ক সহ সংশ্লিষ্ট অনেক বিদ্যুৎ কর্মী ছাটাই হয়ে যাবেন। এই মিটার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বুঝতেও পারেন না যে তিনি কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করেছেন। কোনও আউটসোর্সিং কোম্পানি থেকে সরাসরি গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহার ও বিলের হিসেব মেসেজ করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে জনগণের ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা খরচ করে এবং হাজার হাজার বিদ্যুৎ কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়ে বিদ্যুৎ বিতরণের যে ব্যবস্থা গোটা দেশে গড়ে উঠেছে তা ব্যবহার করে বৃহৎ ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় করে মুনাফার পাহাড় বৃদ্ধি করবে। ইতিমধ্যে আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাই গ্রাহকদের অভিযোগে তারা কর্ণপাত করতে চাইছে না। সরকার ব্যবসায়ীদের মুনাফা আরো বাড়িয়ে দিতে ‘টিওডি’ ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে। ফলে দিনে ও রাতে দু’ধরনের বিল দিতে হবে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সাধারণ গ্রাহকরা যখন দিনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তখন দিনের বিলের প্রায় দ্বিগুণ টাকা বিল হিসেবে দিতে হবে। প্রাইভেট কোম্পানির হাতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা চলে গেলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধি পাবে বলে ক্ষোভ ব‍্যক্ত করে স্মার্ট মিটার অবিলম্বে প্রত‍্যাহারের দাবি জানান ।

Author

Spread the News