ভাগ্যগুণে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী কিশোর পুরস্কার হিসেবে পেল ওমরাহ হজ
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২০ ফেব্রুয়ারি : এক অনন্য মুহূর্তের সাক্ষী হল বরাকভিত্তিক মুসাবাকাতুল কোরান প্রতিযোগিতা।” পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম স্থানাধিকারীকে ওমরাহ হজ পালনের টিকিট দেওয়ার কথা থাকলেও ভাগ্যগুণে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী কিশোর সাকিবুল হাসানও পেয়ে গেল ওমরাহ হজের টিকিট। একই প্রতিযোগিতা থেকে বরাক উপত্যকা থেকে এই প্রথমবার দুজন ছাত্রকে কোরান প্রতিযোগিতার পুরস্কার স্বরূপ ওমরাহ হজে পাঠানো হবে। পায়াম-এ কোরান ফাউন্ডেশন বরাকভ্যালি-র ব্যবস্থাপনায় শ্রীভূমি জেলার সদরের লাগোয়া কানিশাইশ মরকজ মসজিদে আয়োজিত হওয়া দু’দিনব্যাপী বরাকভিত্তিক মুসাবাকাতুল কোরান প্রতিযোগিতা চলে শেষ হয় বুধবার। এতে বরাকের তিন জেলা কাছাড়, শ্রীভূমি ও হাইলাকান্দি সহ বিভিন্ন হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রায় একশো জন ছাত্র অংশ নেন। মোট তিনটি বিভাগে নেওয়া হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। ‘ক’ বিভাগে ছিল কোরানের ১ নম্বর পারা থেকে ৩০ নম্বর পারা পর্যন্ত। ‘খ’ বিভাগে ছিল ১ নম্বর পারা থেকে ১৫ নম্বর পারা পর্যন্ত এবং ‘গ’ বিভাগে ছিল ১ নম্বর পারা থেকে ৭ নম্বর পারা পর্যন্ত। প্রতিটি বিভাগের প্রতিযোগিদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্য আলাদা আলাদা পুরস্কার দিয়েছে পায়াম-এ কোরান ফাউন্ডেশন বরাকভ্যালি। সঙ্গে উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের শিক্ষকদের জন্যও ছিল বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।
এতে মূল আকর্ষণ ছিল ক, বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারীর জন্য ওমরাহ হজ পালনের টিকিট। বুধবার রাত আটটায় এই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হলে রাত নয়টায় শুরু হয় প্রকাশ্য অধিবেশন। মওলানা কারি আবুল কালাম আজাদের পৌরহিত্যে অধিবেশনে ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুদুর মহারাষ্ট্রের আক্কালকুয়া থেকে আগত মওলানা মুফতি কারি আসফাক।

এ দিনের অনুষ্ঠানের ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণী একইসঙ্গে হয়। এতে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে ওমরাহ হজের টিকিট পেয়েছে পাথারকান্দি এলাকার আল-ইফলাহ তাহফিজুল কোরান কাবাড়িবন্দ মাদ্রাসার ছাত্র মুহাম্মদ আলি। পাশাপাশি তাঁর শিক্ষককে নগদ ২০ হাজার টাকার চেক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়েছে। ওই বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে লঙ্গাই বেতাইলে অবস্থিত খাদিমুল উলুম ফয়জ-এ মদিনা মাদ্রাসার মাত্র দশ বছরের কিশোর সাকিবুল হাসান, তাঁকে নগদ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কিশোর সাকিবুল জন্মগতভাবে তোতলা অর্থাৎ কথা বলার সময় তাঁর জিভ আটকে যায়, সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি শব্দ বা শব্দের উচ্চারণের মধ্যে অস্বাভাবিক বিরতি দেন। কিন্তু কিশোর সাকিবুল পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের সময় তাঁর তোতলামির আক্রান্ত একটুও বোঝা যায় না। তাঁর এই আকস্মিক ঘটনা দেখে এটাকে কোরানের জীবন্ত অলৌকিক ক্ষমতা বলে আখ্যা দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এছাড়াও প্রধান অতিথির আহ্বানে তাঁকেও এদিনের উপস্থিত শ্রোতারা মিলে ওমরাহ হজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে দারুল উলুম কানিশাইল মরকজ মাদ্রাসার ছাত্র মাহবুবুর রহমান, তাঁকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

‘খ’ বিভাগে ১ম পুরস্কার ২৫ হাজার টাকা পেয়েছে এংলারবাজার নাছিম আক্তার কাজি হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র জসিম উদ্দিন। ২য় পুরস্কার অর্জন করে ২০ হাজার টাকার নগদ অর্থ পেয়েছে উবাই ইবনে কাব মাদ্রাসার ছাত্র ইলিয়াস আহমেদ। ৩য় স্থান অর্জন করে ১৫ হাজার টাকার পুরস্কার পেয়েছে পাথারকান্দি মেহেন্দিবাড়ি হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আবু সুফিয়ান আহমেদ। ‘গ’ বিভাগে ১ম স্থান অর্জন করে ১০ হাজার টাকার পুরস্কার পেয়েছে বাখরশাল হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আবু সাঈদ। ২য় স্থান অধিকার করে ৭ হাজার টাকার পুরস্কার পেয়েছে খাদিমুল উলুম ফয়জ-এ মদিনা মাদ্রাসার ছাত্র জাহির হুসাইন এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে ৫ হাজার টাকার পুরস্কার পেয়েছে কনকপুর ফয়জ-এ আম মাদ্রাসার ছাত্র পারুল আহমেদ চৌধুরী।

এদিন সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বিভাগের উত্তীর্ণ কৃতী পড়ুয়াদের নগদ অর্থের চেক প্রদান করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এছাড়াও উত্তীর্ণ সব ছাত্রের শিক্ষকদেরকেও বিশেষ ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। উত্তীর্ণ সবাইকে নগদ অর্থের পাশাপাশি বিশেষ স্মারক দিয়ে সম্মাননা জানিয়েছে আয়োজক পায়াম-এ কোরান ফাউন্ডেশন এবং জেড এম টোর অ্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড ট্র্যাভেলস্। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী সব ছাত্রদেরকে শংসাপত্র ও নগদ ৫০০ টাকা করে শান্তনা পুরস্কার দিয়েছে আয়োজক সংস্থা। দু’দিনব্যাপী কোরান প্রতিযোগিতার পরীক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত মওলানা কারি শাকির কাজি, মওলানা কারি সমি উদ্দিন, মওলানা কারি আমিরুল ইসলাম।