রাসলীলাকে ঘিরে দ্বিতীয় বৃন্দাবনধামে পরিণত পাথারকান্দির উনামগাঁও রাসমণ্ডপ
মোহাম্মদ জনি, করিমগঞ্জ।
বরাক তরঙ্গ, ১৬ নভেম্বর : প্রতিবছরের ন্যায় এবার ওব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পাথারকান্দির ঐতিহ্যবাহী উনামগাঁওয়ের রাধামাধবজীউ দালান মন্দিরে ৮৭তম রাসলীলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাতভর এক উৎসব মুখর পরিবেশ ছিল। সকাল থেকেই উৎসবস্থলের উভয়পাশে মেলা বসে। দুর্গাপুজোর পর ভরা কার্তিকের ভরা পূর্ণিমার পুন্য লগ্নে বিশেষ করে বৃহত্তর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান এই রাসলীলা উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত সমাবেশে মুখোরিত হয় উনামগাঁওয়ের এই রাস চত্বর। এর আগে বৃহত্তর মণিপুরি অধ্যুষিত এলাকায় গতকাল শুক্রবার সকাল এগারোটায় গোষ্ঠলীলা শুরু হয়। এই গোষ্ঠ লীলায় প্রতিটি দলে ১০-১২ জন চৌদ্দ থেকে ষোল বছরের যুবক অংশ নেয়। এতে রাখাল সাজে কৃষ্ণের বাল্যকালকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য তথা গোষ্ঠলীলা। এরমধ্যে শিব-দুর্গা সাজে বিভিন্ন বয়সী ছেলে-মেয়েদের যোগ দিতে দেখা গেছে। রাতে রাসলীলার মত এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। পরে এনিয়ে তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উনামগ্রামের এই প্রাচীন রাসলীলার অনুষ্ঠানস্থলকে দ্বিতীয় বৃন্দাবন ধামের সঙ্গে তুলনা করেন। বলেন, আগামীদিনে বৃহত্তর এই দালান মন্দিরের উন্নয়ণকল্পে অসম সরকার ছাড়াও এদিন তিনি তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে আরও পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদানের ঘোষণা করেন।
এদিন সন্ধ্যা ছ’টায় বিশেষ সন্ধ্যা আরতির পর পাশ্ববর্তী মণিপুর রাজ্য সহ স্থানীয় চৌদ্দজন বাদক দ্বারা চৌদ্দবাদল মহাসংকীর্তন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এমর্মে কথা বলতে গিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এবার ও রাজ্যের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রাচীন এই রাসলীলা উদযাপনের অংগ হিসেবে এককালীন নগদ পঁচিশ হাজার টাকা ও পাথারকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল তাঁর ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে আরও পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অনুদানের ঘোষণা করেন। এতে তাঁরা উভয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তারা বলেন, অখণ্ড ভারতবর্ষে বাংলাদেশের বাণু বিল থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আসা প্রয়াত গৌরনিতাই শর্মা, নীলদ্বজ সিংহের হাত ধরে উনামগাঁওয়ের রাধামাধবজীউর দালান মন্দিরে এই মহারাসলীলা এবার দীর্ঘ ৮৭ তম বর্ষে পদাপর্ন করল। সন্ধ্যায় চৌদ্দবাদল মহাসংকীর্তনের পর পরই রাত এগারোটা থেকে শুরু হয় শ্রীশ্রী কৃষ্ণের শারদীয়া মহারাসলীলা। এতে বৃন্দাবনের গোপীনিদের সঙ্গে কৃষ্ণের মধুর লীলার কথা গান ও নৃত্যে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন শিল্পীরা। সমস্ত রাত ব্যাপী চলা এই প্রাচীন রাসলীলার পরিসমাপ্তি ঘটে শনিবার ভোর পাঁচটায়।
অনুষ্ঠানে সার্কল অফিসার বলীনবাবা বালারী, পাথারকান্দি ও লোয়ারপোয়া উন্নয়ণ খণ্ড আধিকারিকদ্বয় ছাড়া ও আয়োজকদের পক্ষ থেকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কার্যকরী সভাপতি বেনু সিনহা, সাধারণ সম্পাদক সুজিৎ সিনহা, সভাপতি রাখাল সিনহা কোষাধ্যক্ষ মধু সিনহা, নারিকল সিনহা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এই মহারাসলীলা বৃহত্তর এই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি প্রধান উৎসব। রাস মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথাবস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় প্রেমাত্মক প্রকৃতিতে রূপ প্রদান করে অঙ্কন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঐতিহাসিক মহারাসলীলা সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে সম্পুর্ন করায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে কার্যকরী সভাপতি বেনু সিনহা, সাধারণ সম্পাদক সুজিৎ সিনহা, সভাপতি রাখাল সিনহা কোষাধ্যক্ষ মধু সিনহা, নারিকল সিনহা প্রমুখ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।