রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ

অনিতা পাল, কাটিগড়া।
বরাক তরঙ্গ, ৯ জুন : কাছাড় জেলার কাটিগড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জালালপুর মহাদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাটুলমারা গ্রান্ট এলাকায় এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ। গুমড়া সমবায় সমিতির অন্তর্গত সংশ্লিষ্ট ডিলার সুধা গঞ্জুর বিরুদ্ধে প্রায় পঞ্চাশজন রেশন কার্ডধারী গ্রাহক অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগগুলি শুধু প্রশাসনিক অনিয়মে সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নৈতিক ও মানবিক অসংবেদনশীলতা।

স্থানীয় বাসিন্দা বাসন্তী ঘাটোয়ার, শেফালী রিকিয়াসন, অঞ্জলী গোয়ালা সহ বহু গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, ডিলার সুধা গঞ্জু প্রায়শই রেশন গ্রহণ করতে আসা মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এছাড়াও, নতুন রেশন কার্ড তৈরি বা পুরনো কার্ডে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে তিনি অর্থ দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বলে অভিযোগকারীদের বক্তব্য।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি হল, কোনও পরিবারে কারও মৃত্যু হলে, মৃত্যুপ্রমাণপত্র জমা দেওয়ার আগেই ডিলার নিজ উদ্যোগে মৃত ব্যক্তির নাম রেশন কার্ড থেকে কর্তন করে দেন। অথচ ওই মৃত ব্যক্তির নামে বরাদ্দ হওয়া রেশন সামগ্রী আর পরিবারের হাতে পৌঁছায় না। অভিযোগ উঠেছে, বরাদ্দকৃত চাল কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে যথেষ্ট প্রশ্ন এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

বাসন্তী ঘাটোয়ার অভিযোগ করেছেন, তাঁর পরিবারের চারজন সদস্যের নাম রেশন কার্ডে থাকলেও রেশন সামগ্রী মাত্র দুজনের হিসেবে দেওয়া হয়। অনুরূপ অভিযোগ অঞ্জলী গোয়ালারও, যিনি জানান, তাঁর ছয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য বরাদ্দ হওয়া রেশন তিনজনের হিসেবে সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও সমাজসেবী অজয় শুক্লবৈদ্য এক মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, সম্প্রতি প্রয়াত সুমিতা গৌড়ের নাম ডিলার কর্তৃক রেশন কার্ড থেকে বাদ দেওয়া হলেও, ওই নামেই আজও চাল বরাদ্দ হচ্ছে। এর অর্থ, চাল বরাদ্দ হচ্ছে কিন্তু তা মৃত ব্যক্তির পরিবার পাচ্ছে না। তাহলে সেই রেশন কোথায় যাচ্ছে—এই প্রশ্নে উঠেছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে। এই সংক্রান্ত অভিযোগগুলি নিয়ে ভুক্তভোগীরা কাছাড়ের জেলাশাসক ও কাটিগড়ার সার্কল অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।

রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ

এদিকে, গোটা ঘটনা সম্পর্কে গুমড়া সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান ব্রজবাসী দাসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে ডিলারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনায় কাটিগড়ার জনজীবনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কতটা দ্রুততার সঙ্গে এই অভিযোগগুলির তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং রেশন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় কি না।

Author

Spread the News