শিলচরে ধামাইল নৃত্যে শিরোপা অর্জন মিতালীজ গ্রুপ হাইলাকান্দির
সম্মিলিত লোকমঞ্চের দুদিনব্যাপী সমবেত ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা সম্পন্ন
বরাক তরঙ্গ, ৩০ ডিসেম্বর : সম্মিলিত লোকমঞ্চের দুদিনব্যাপী সমবেত ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় ধামাইল নৃত্যে শিরোপা অর্জন করল মিতালীজ গ্রুপ হাইলাকান্দি। ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন মিতালীজ গ্রুপের অর্পিতা গুপ্ত। শিলচর শিশু উদ্যানে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বরাক উপত্যকা ভিত্তিক সমবেত ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটলো রবিবার। এবছর ধামাইল প্রতিযোগিতায় মোট ২৫টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছে মা অন্নপূর্ণা ধামাইল সংস্থা দুধপাতিল এবং তৃতীয় স্থান দখল করেছে নন্দিনী গ্রুপ বড়খলা। অনুরূপভাবে ২০২৪ সালের ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে মা অন্নপূর্ণা ধামাইল সংস্থার সর্বাণী নাথ এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে মিতালীজ গ্রুপ হাইলাকান্দির অর্পিতা দেব। সমবেত ধামাইল নৃত্যে প্রথম পুরস্কার হিসাবে স্বর্গীয় কৃষ্ণ চন্দ্র দাস স্মৃতি পুরস্কার বাবদ নগদ সাত হাজার টাকা, স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়, স্মারক ও অর্থ স্পন্সর করেন সংস্থার সদস্যা স্মৃতি দাস (পৌত্রী)।
এদিন আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে তিনি নিজেও শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। দ্বিতীয় পুরস্কার হিসাবে প্রয়াত মন্মথ কুমার দাস স্মৃতি পুরস্কার বাবদ নগদ পাঁচ টাকা, স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেন মহোজিৎ দাস (পুত্র), পুরস্কার তুলে দেন মহোজিৎ দাসের ভ্রাতা ওঁঙ্কারজিৎ দাস। তৃতীয় পুরস্কার রতীশ চন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি স্মারক পুরস্কার বাবদ নগদ তিন হাজার টাকা, স্মারক ও শংসাপত্র প্রদান করা হয়। পুরস্কার স্মারক ও অর্থ স্পন্সর করেন তাঁর পুত্র রজত ভট্টাচার্য, শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রজত ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য। এদিকে ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জগৎ মোহন সিংহ স্মৃতি স্মারক পুরস্কার হিসাবে স্মারক ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা অর্থরাশি স্পন্সর করেন গৌতম সিনহা (পুত্র), শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গৌতম সিনহা। ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পুরস্কার সরোজ কুমার ভট্টাচার্য স্মৃতি স্মারক ও নগদ তিন হাজার টাকা অর্থরাশি স্পন্সর করেন সুধেন্দু ভট্টাচার্য (পুত্র) এবং নিজ হাতে শিল্পীদের পুরস্কার তুলে দেন। এবারের ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার তৃতীয় পুরস্কার বিহারিনী নাথ স্মৃতি স্মারক ও নগদ দুই হাজার টাকা অর্থরাশি স্পন্সর করেন বিহারিনী নাথের পুত্র দীপক নাথ। শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন দীপক নাথ ও মঙ্গলা নাথ (পুত্রবধু)। বিজয়ী দল গুলির হাতে পুরস্কার তুলে দেন সম্মিলিত লোকমঞ্চের সভাপতি ডঃ অনুপ কুমার রায়, আমন্ত্রিত অতিথি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি বাবুল হোঁড়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অতনু ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তথা ড্রিমস এর সভাপতি গৌতম গুপ্ত, বরাক উপত্যকা সাংবাদিক সংস্থার চেয়ারম্যান হারাণ দে, বিশিষ্ট সমাজসেবী সীমান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস।
এদিকে ধামাইল উৎসবকে সামনে রেখে সন্ধ্যায় এক মনোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বরাক উপত্যকার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মঙ্গলা নাথ, তন্দ্রা রায় সহ উদীয়মান শিল্পী মনিমিতা গোস্বামী, জলি শুক্লবৈদ্য, রাজশ্রী নাথ, রুদ্রানী দাস, পূজা দাস সংগীত পরিবেশন করেন। একক লোকনৃত্য পরিবেশন করেন অপি নাথ। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল স্বামী বিরজানন্দ বিদ্যানিকেতন ধামাইল সংস্থা নিলামবাজারের ছেলেদের পরিবেশিত সমবেত ধামাইল নৃত্য। সংস্থার তরফে তাদের আর্থিক পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
লোক সংস্কৃতির অঙ্গ ধামাইল উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বিগত দু’দিন বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোক সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ শহরের শিশু উদ্যানে জড়ো হয়েছিলেন। মন্ত্রীদ্বয় কৌশিক রায় ও কৃষ্ণেন্দু পাল, হোজাইর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ মানবেন্দ্র দত্ত চৌধুরী, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, কবি- সাংবাদিক অতীন দাশ, লোক গবেষক অধ্যাপক অমলেন্দু ভট্টাচার্য, সমাজসেবী স্বর্ণালী চৌধুরী, বাবুল হোঁড় থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দুদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিয়েছেন।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী মনোজ জৈন, সুজন দত্ত, শেখর দেবরায়, অজয় চক্রবর্তী, অজয় রায় প্রমুখ এছাড়াও ছিলেন সম্মিলিত লোকমঞ্চের সহ-সভাপতি সুপ্রদীপ দত্তরায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস, কোষাধ্যক্ষ ঝিমলি নাথ, যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ, বরিষ্ঠ সদস্য দীপক নাথ, গৌরী শঙ্কর নাথ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এ বছর ধামাইল নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দলগুলি হচ্ছে- মা ভবানী ধামাইল দল (দুধপাতিল), একান্ত আপন সংস্থা( লালা), মা আনন্দময়ী ডান্স গ্রুপ (হাইলাকান্দি), স্বামী বিরজানন্দ বিদ্যানিকেতন ধামাইল সংস্থা ( নিলামবাজার), সম্মিলিত লোকপরিষদ (শ্রীভূমি), শ্রীভূমি ধামাইল সংস্থা (শ্রীভূমি), সাই সুরভারতী কলাকেন্দ্র (শ্রীভূমি), পাঞ্চজন্য সাংস্কৃতিক সংস্থা (হাইলাকান্দি), গোবিন্দনগর ধামাইল গ্রুপ (লক্ষীপুর), লক্ষ্মী ডান্স একাডেমী (হাইলাকান্দি), সঞ্জিতা গ্রুপ (হাইলাকান্দি), দিশান ডান্স গ্রুপ (মালুগ্রাম), ছোটলাল শেঠ ইনস্টিটিউট (শিলচর), রূপম সাংস্কৃতিক সংস্থা ( শিলচর), মাদারিপার এমই স্কুল (লালা), স্বরলিপি ধামাইল সংস্থা ( শিলচর), রাইধনী ধামাইল দল ( শিলচর), লোক সাংস্কৃতিক পরিষদ( শিলচর), অষ্ঠসখী দল (বড়খলা), অষ্টসখীবৃন্দ (বিবেকানন্দ রোড শিলচর), নূপুর ডান্স গ্রুপ ( মালুগ্রাম), শুক্লা গ্রুপ ( শিলচর) ও নটরাজ নৃত্যালয়া ডান্স অ্যাকাডেমি (শিলচর)। দু’দিনব্যাপী চলা ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ধর্মনগরের দৈপায়ন ভট্টাচার্য ও শিলচরের দেবলিনা চৌধুরী। গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিপ্লব বিশ্বাস। এক প্রেস বার্তায় এ খবর জানিয়েছেন আয়োজক সম্মিলিত লোকমঞ্চের প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ।