পাথারকান্দির বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১ জুন : পাথারকান্দিতে বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেন্দ্রের অন্তর্গত নালিবাড়ি ও বিলবাড়ি এলাকার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখলেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল।এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শ্রীভূমি জেলার জেলা আয়ুক্ত প্রদীপকুমার দ্বিবেদী। এলাকার বাঁধের অবস্থা, নদী তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ও জলমগ্ন গ্রামের বাস্তব চিত্র প্রত্যক্ষ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। প্রবল বৃষ্টি পাতের ফলে পাথারকান্দির নালিবাড়ি ও পইলামুলিতে বর্তমানে নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ইতিমধ্যেই ছোট ছোট চিড় ধরেছে, যার ফলে স্থানীয় মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী লঙ্গাই নদীর বাঁধ ভেঙে পাথারকান্দির বিস্তার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে প্রশাসনিক গাফিলতিতে আঙুল তুলে ক্ষোভে ফুঁসছে ভুক্তভোগী জনতা।অভিযোগ মতে স্থানীয়জলসম্পদ বিভাগের অবহেলাতেই প্রতি বছর বর্ষার সময় এমন বিপর্যয় দেখা দে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ, রূপ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের জরুরি বৈঠক পাথারকান্দিতে।
লঙ্গাই নদীর বাঁধ ভেঙে আবারও বিধ্বস্ত হল পাথারকান্দি।কয়েকদিনের টানা মুষলধারে বৃষ্টির জেরে লঙ্গাই নদী সহ অন্যান্য ছোট বড় ছড়া নালা ফুলেফেঁপে ওঠে, আর এদিন সকালে লঙ্গাই নদীর বাঁধ ভেঙে আবারও বিধ্বস্ত হয়ে উঠেছে পাথারকান্দির বিলবাড়ি সংলগ্ন অঞ্চলে প্রায় দেড়শ মিটার নদী বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এই ভাঙনের ফলে শুধু ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটই নয়, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ফসলি জমি, এমনকি গবাদি পশুও পানির তোড়ে ভেসে যায়। জনজীবন কার্যত থমকে গেছে। বন্যার কবলে পড়ে শত শত মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এবার উঠে এসেছে প্রশাসনিক ব্যর্থতার করুণ চিত্র। শহরের কালীবাড়ি রোড, থানা রোড, নয়াডহর, পইলামুলি, কচুবাড়ি, নালিবাড়ি, বিসর্জন ঘাট সহ একাধিক জনবসতিপূর্ণ এলাকা নদীর জলে ডুবে গিয়েছে। কোথাও কোমরজল, কোথাও আবার বাড়ির চালার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে স্রোতের গতি।

স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, এই বাঁধ বহুদিন ধরেই দুর্বল ছিল। বারবার জলসম্পদ বিভাগকে জানানো হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এখন ঘঐ সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায়।এবার প্রথম নয় আগেও বহু বার এমন পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হয়েছে। নালিবাড়ি ও পইলামুলিতে বর্তমানে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ইতিমধ্যেই ছোট ছোট চিড় ধরেছে, যার ফলে স্থানীয় মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা তাঁদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন জলবন্দি অবস্থায় দিনের পর দিন বসবাস, খাদ্য সংকট, পানীয় জলের অভাব, শিশুদের অসুস্থতা ইত্যাদি। স্থানীয় এক বাসিন্দরা বলেন, ঘরের ভেতর পা রাখার জায়গা নেই। মশা-মাছির কামড়ে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সরকারি সাহায্য পেলে বাঁচি।
এদিকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে, বিকেল ৫টা পর্যন্ত লঙ্গাই নদী বিপদসীমার প্রায় ২৪.৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রশাসনের আশ্বাস অনুযায়ী, ত্রাণশিবির খোলা হচ্ছে, শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে,। নদীর বাঁধ ভাঙন যেন একবার নয়, বারবার পাথারকান্দিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে অবহেলা ও গাফিলতির মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকেৃইই।

এদিকে, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুর এই পরিদর্শনে দুর্গত জনগণের মধ্যে আশার আলো ফুটে উঠে।মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল-এর উপস্থিতি এবং পরিদর্শনকে এলাকাবাসী অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘদিন পর এমন উচ্চপর্যায়ের নজরদারিকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয়রা বলেন, আজ অন্তত আমাদের কথা কেউ শুনেছে, দেখেছে। এবার যেন টেকসই ব্যবস্থা সত্যিই হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই, তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত, সঠিক প্রশাসনিক তৎপরতা এবং মানবিক সহমর্মিতার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল-এর আজকের পরিদর্শন সেই আশার বার্তাই যেন বহন করে এনেছে পাথারকান্দির জনপদে।