প্রিসাইন্সিয়া সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে শহিদ তর্পণ
বরাক তরঙ্গ, ২১ মে : হাইলাকান্দির প্রিসাইন্সিয়া সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে পূর্ণ শ্রদ্ধায় পালিত হল ভাষা শহিদ দিবস। অনাড়ম্বর এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয় ভাষা শহিদদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়। ভাষা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন স্কুলের অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর অঞ্জন কুমার সাহা, অধ্যক্ষ ড. পারিজাত দেবরায়, উপাধ্যক্ষ চিন্ময় দত্ত, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. অভিজিৎ মিত্র, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ড. তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী, শিক্ষিকা চৈতালী চক্রবর্তী, গৌতমী শর্মা, বহ্নিশিখা দেব, অনন্যা দাস, রিম্পি চক্রবর্তী, জুয়েল দাস ও নিবেদিতা দেবরায় সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
সংক্ষিপ্ত ভূমিকার অবতারণা করে অনুষ্ঠান শুরু করেন স্কুলের বাংলা বিষয়ের শিক্ষিকা বর্ণালী পাল। তিনি অনুষ্ঠানের মূল সুর ধরিয়ে দেন। এই ভাষা আন্দোলনটি যেহেতু শুধুমাত্র বাংলা ভাষার আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বৃহত্তর অর্থে এটি ছিল যে-কোনো ভাষা-ভাষীর মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলন- সেকথা স্মরণে রেখে প্রথমে আবৃত্তি পরিবেশনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার শহিদদের শ্রদ্ধা জানায় দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়ুষী সাহা। মণিপুরি ভাষার শহিদ সুদেষ্ণা সিংহ স্মরণে মণিপুরি ভাষায় আবৃত্তি পরিবেশন করে দশম শ্রেণির ছাত্রী বাগেশ্বরী সিনহা।

ছাত্রছাত্রীদের উনিশের ইতিহাস জানাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছিলেন বিশেষ বক্তৃতা অনুষ্ঠানের। তাতে নির্বাচিত বক্তা হিসেবে ছিলেন স্কুলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. অভিজিৎ মিত্র। তাঁর নির্ধারিত বক্তব্যের বিষয় ছিল: ‘উনিশে মে-র ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট’। সুবক্তা হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে তাঁর। সাবলীল ভাবে তিনি ১৯৬০ এর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সময়-ইতাহাস থেকে শুরু করে মাতৃভাষাকে নিয়ে আমাদের গর্বের অহংকারের বিবিধ কারণ তুলে ধরে উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নির্বাচিত বক্তাদের অন্যতম ছিলেন স্কুলের অ্যাডুকেশন বিষয়ের শিক্ষিকা গৌতমী শর্মা। তাঁর নির্ধারিত বক্তব্যের বিষয়: ‘শিক্ষা-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব’। তিনি খুব আন্তরিক শৈলীতে মাতৃভাষার সংজ্ঞা থেকে শুরু করে মাতৃভাষা শিক্ষার চতুর্বিধ স্তর ও তার বৈশিষ্ট্য, জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০২০ অনুযায়ী শিশু শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সতথ্য আলোচনা করেন। উল্লেখ্য, দু’জন সম্মানিত বক্তার-ই বক্তব্য ছিল সহজ, সুন্দর এবং ছাত্র-ছাত্রীদের বোধের উপযোগী। ফলত এই বক্তব্য অনুষ্ঠান সামগ্রিকভাবে ফলপ্রসূ হয়। তা স্পষ্ট হয়ে যায় অনুষ্ঠানের পরবর্তি পর্বে।

অনুষ্ঠান আয়োজকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বক্তব্য অনুষ্ঠানের পরই থাকবে ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই প্রতিযোগিতার নামকরণ করা হয়েছিল ‘মননে উনিশ, মেধায় উনিশ’। যেখানে বক্তাদের উপস্থাপিত বক্তব্যের ভেতর থেকেই প্রশ্ন করা হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা কতটা মনোযোগ দিয়ে উনিশের কথা শুনেছে এবং হৃদয়ঙ্গম করেছে, সেইসঙ্গে তাদের স্মৃতির প্রখরতা ইত্যাদি যাচাই করাই ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।

এই পর্বটি দক্ষতার সঙ্গে সঞ্চালনা করেন স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা চৈতালী চক্রবর্তী। তাঁর সাবলীল সঞ্চালনায় পর্বটি মনোগ্রাহী হয় ওঠে। ছাত্রছাত্রীদের সাগ্রহ অংশগ্রহণ প্রকৃত অর্থে এই আয়োজনকে সার্থক করেছে। এই প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক উত্তর দিয়ে বিজয়ী হয় স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী তৃষা দেবনাথ। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি পর্বে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্কুলের অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর অঞ্জন কুমার সাহা। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে, ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন সঞ্চালক বর্ণালী পাল।