ইমাদ উদ্দিন ও জন্মজিৎ রায় স্মরণ বরাকবঙ্গের

বরাক তরঙ্গ, ১ ফেব্রুয়ারি : বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বরাক উপত্যকা এখন গভীর সঙ্কটে। এই সময়ে যখন চিন্তা এবং চেতনায় সমৃদ্ধ সুস্পষ্ট পথের সন্ধানে এই অঞ্চলের জনগণ তখন উপত্যকার মেধা, চিন্তা এবং চেতনার দুই অগ্রদূত জন্মজিৎ রায় এবং ইমাদ উদ্দিন বুলবুলের প্রয়াণ অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করল। শুক্রবার শিলচর বঙ্গভবনে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতি আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় বিভিন্ন বক্তার মুখে এই কথাই ফুটে ওঠে। জেলা সমিতির সহ-সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ সংগঠন এবং শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ও বিভিন্ন এই স্মৃতিচারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেক বক্তাই বরাক উপত্যকার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় প্রয়াতের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাঁদের জীবনআদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে রেখে যাওয়ার জন্য বরাকবঙ্গকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিলচর বার সংস্থার সভাপতি দুলাল মিত্র বলেন, ইমাদ উদ্দিন বুলবুল বহুমুখী প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আইন পেশার পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা তথা গবেষণা এবং সর্বোপরি একজন সমন্বয়বাদী ব্যক্তি হিসেবে ইমেজ গড়ে তুলেছিলেন। আইনপেশাকে তিনি শুধু পেশা হিসেবে না নিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষকে বিনামূল্যে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতেন। উদাহরণ হিসেবে দুলালবাবু তুলে ধরেন কালাইনে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হওয়া মতাইর আলির পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিয়েছিলেন। এই মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার নারায়ণ তামুলির চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হয়েছে। বুলবুলকে তিনি মৈত্রীর সেতু হিসেবে অভিহিত করে। বলেন, মাদ্রাসা পড়ুয়ারা সাধারণত দেখা যায় গোড়াপন্থী হন কিন্তু তিনি কিভাবে বামপন্থী চিন্তাচর্চা এবং যুক্তিবাদী হলেন এটা তাঁর মনে সবসময় খটকা লাগে।

প্রয়াত ইমাদ উদ্দিন বুলবুলের শ্যালক ডাঃ আজমল হোসেন মজুমদার কৈশোরকাল থেকে তাঁকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেভাবে দেখেছেন তা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বুলবুল আপাদমস্তক ধার্মিক হলেও ধর্মান্ধ ছিলেন না। নিজের বৈষয়িক ব্যাপারে গুরুত্ব না দিয়ে সবসময় মানুষে মানুষে মেলবন্ধনের চিন্তা করতেন। আইনজীবী হিসেবে মক্কেলকে শুধু মক্কেল হিসেবে না দেখে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা করে গেছেন।

ইমাদ উদ্দিন ও জন্মজিৎ রায় স্মরণ বরাকবঙ্গের

বরাকবঙ্গের কাছাড় জেলা সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী ইমাদ উদ্দিন বুলবুল সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, বরাকের ৬১-র ভাষা আন্দোলন এবং মুসলিম সমাজ নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল একাংশের মধ্যে, তিনি সেই ধারণা দূর করতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এবং আহতের তথ্য সংগ্রহ করে তা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। প্রতিববছর বরাকবঙ্গ উনিশের আবাহন নাম দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন যাদের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ভাষা সেনানী পত্নী ধনকুমারীকে বাসস্থান করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন।

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির কোষাধ্যক্ষ আশিস চৌধুরী বলেন, বরাক উপত্যকায় দুই প্রধান সম্প্রদায়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

ইমাদ উদ্দিন ও জন্মজিৎ রায় স্মরণ বরাকবঙ্গের

এটা একটা চিন্তার বিষয়। নতুন প্রজন্ম নিজের প্রতিষ্ঠা নিয়েই ব্যস্ত। এদিনের স্মৃতিচারণ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে সাত্যকি দাশ, জনসংযোগ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্তা হারাণ দে, অধ্যাপক সন্তোষ চক্রবর্তী, কবি কস্তুরী হোম চৌধুরী, মিলন উদ্দিন লস্কর, বরাক এডুকেশন সোসাইটির পক্ষে আনোয়ারুল হক লস্কর, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের আপ্তাব উদ্দিন লস্কর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। উভয়ের আত্মার চিরশান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন জেলা সমিতির সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা। দুই প্রয়াতের জীবনপঞ্জি পাঠ করেন যথাক্রমে অধ্যাপক নবেন্দু বণিক ও অরুণদ্যোতি গুপ্ত।

Author

Spread the News