কাছাড়ি রাজার প্রতিষ্ঠিত আদি শ্রীশ্রীনৃমাতা ভৈরব মন্দিরের জমি দখল, মামলা
অনিতা পাল, কাটিগড়া।
বরাক তরঙ্গ, ২৬ এপ্রিল : বরাক উপত্যকায় যে ক’টি পৌরাণিক ধর্মস্থান আছে, এরমধ্যে অন্যতম একটি মন্দির হল কাছাড়ের বড়খলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত উজাননগর গ্রামের আদি শ্রীশ্রীনৃমাতা ভৈরব মন্দির। প্রাচীন কাছাড়ি রাজার রাজত্বকাল থেকে আজ অবধি উজাননগর গ্রামে কাছাড়ি রাজার প্রতিষ্ঠিত দেবী শ্রীশ্রীনৃমাতা মন্দিরে শ্রীশ্রীনৃমাতা ও ভৈরবের পূজার্চনা হয়ে আসছে। দুই শতাধিক বছরের পুরোনো এই মন্দিরের প্রায় ২০ বিঘা ১৯ ছটাক জমি রয়েছে। কিন্তু সময়ের তালে তালে জমি হাতছাড়া হতে শুরু করে। কিছু লোকেরা জমিগুলো জবরদখল করতে শুরু করেন। শুক্রবার মন্দির পরিসরে দাঁড়িয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পশ্চিম কাছাড় জেলা সভাপতি বিধু ভুষন দেব, সম্পাদক জিতেন্দ্র চন্দ্র দাস, বজরং দল সংযোজক বৈভব নাথ এবং শ্রীশ্রীনৃমাতা-ভৈরব সেবা সমিতির পক্ষে কিশোর বর্মণ, জহরলাল বর্মণ, নন্দ কিশোর বর্মণ, মনোজিত নন্দি সহ সমিতির অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, এই মন্দিরের নিষ্কর জমি ভিন্ন ভিন্ন দাগ-পাট্টার শাইলউরা জমিগুলি সুদীর্ঘ বছর থেকে ভিন্নধর্মের লোকেরা চাষ-বাস করে ভোগদখল করছে। কিন্তু বর্তমানে এই মন্দিরের সংলগ্ন, মন্দিরের নিষ্কর ভূমি, পুরাতন ২ নং পাট্টার ২৯৬ দাগ এবং পুরাতন ১ নং পাট্টার ২৮৬ দাগের শাইলউরা জমিতে ভিন্নধর্মের লোকেরা স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করার উদ্দেশে ঘরের ভিটা তৈরির কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে তারা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দ্বারস্থ হলে পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি নিয়ে কাছাড়ের জেলাশাসকের কাছে তারা প্রাচীন কাছাড়ি রাজার প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রীনৃমাতা মন্দির ও ভৈরব মন্দিরের নিষ্কর শাইলউরা জমিগুলিকে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানান। এতে তারা আরও কিছু দাগ পাট্টার নম্বর উল্লেখ করে বলেন, ওই জমি গুলোতেও একাংশ লোকেদের দখলে রয়েছে। শীগ্রই যেন জমি গুলো পুনরুদ্ধারের জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেন তারা।
ভিএইচপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ পরিচালন সমিতি_____
শ্রীশ্রীনৃমাতা ও ভৈরব মন্দিরের নিষ্কর জমির পাট্টা নং নতুন ৪ (পুরাতন ১) দাগ নম্বর যথাক্রমে পুরাতন২৬৭ নতুন ২৪৮, পুরাতন ২৮৬ নতুন ৩৫৩, পুরাতন ২৮৬/৪৬০ নতুন ৩৫২, পুরাতন ২৮৬/৪৬১ নতুন ৩৫৪, নূতন পাট্টা নং ১ (পুরাতন ২) দাগ নং যথাক্রমে পুরাতন ২৯৬/৪৬২ নতুন ৩৪৯, পুরাতন ২৯৬/৪৬৩ নতুন ৩৫০, পুরাতন ২৯৬/৪৬৪ নতুন ৩৫১। নূতন পাট্টা নং ২ (পুরাতন ২) দাগ নং পুরাতন ২৯৬ নতুন ৩৮৭। নূতন পাট্টা নং ৩ (পুরাতন ২) দাগ নং পুরাতন ৩১০ নতুন ৩৯৫ এবং নূতন পাট্টা নং ৫ (পুরাতন ১) দাগ নং পুরাতন ২৮৫ নতুন ৩৫৫।
উল্লিখিত পাট্টা ও দাগের মোট ২০ বিঘা ১৯ ছটাক জমিগুলির অধিকাংশ জমি কিছু লোকেরা নিজেদের দখলে দেখছেন। তাই জমি গুলো তাদের কাছ থেকে বেদখল মুক্ত করে দেওয়ার জন্য শ্রীশ্রীনৃমাতা-ভৈরব সেবা সমিতির পক্ষে অনুরোধ জানানো হয়। এই মন্দিরের বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন দাগের নিষ্কর জমিগুলিকে ফিরে পাওয়ার সুব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য কাছাড়ের জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

এদিকে, মন্দির সংলগ্ন আনোয়ারপার স্থিত ২ বিঘা দাগ নং ২৬৭ (মন্দির) নিস্কর জমি, ২৮৬ নং দাগে অনুমান ২ বিঘা জমি মন্দির পরিচালন কমিটির তত্ত্বাবধানে আছে। ওই জমিতে ভিন ধর্মী লোক অনধিকার প্রবেশ করে এস্কেকেবেটর লাগিয়ে মাটি তুলে নতুন ঘর তৈরি করার প্রস্তুতি নিলে মন্দির পরিচালন সমিতির পক্ষে দিলীপকুমার বর্মণ বড়খলা থানায় জনৈক বাহার উদ্দিন বড়ভূইয়াকে অভিযুক্ত করে এজাহার দায়ের করলে প্রশাসনের তরফে কাজ বন্ধ করা হয়।