ধলাই-নরসিংহগপুর ও শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল জেলা পরিষদ জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা: নীহাররঞ্জন
রাজীব মজুমদার ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ২৮ এপ্রিল : ধলাই-নরসিংহপুর ও শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল জেলা পরিষদ আসন জয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল জেলা পরিষদ আসনে শবনম লস্কর রেকর্ড ভোটে জয়ী হবেন এবং ধলাই-নরসিংহপুর আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী পম্পি নাথ চৌধুরীও জয়ী হবেন। ধলাই বিধানসভার চারটি জেলা পরিষদ আসনেই ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে। দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে এই দাবি করেছেন ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, গ্রামীণ রাজনীতির উত্তাপ ততই বাড়ছে। জনসমর্থন নিজেদের দিকে টানতে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল স্তরের কর্মীরা পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন। চলছে মিটিং-মিছিল, লাউডস্পিকারের শব্দে কান ঝালাপালা। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তাদের প্রার্থীদের সমর্থনে জোর প্রচার চালাচ্ছে।
ধলাই বিধানসভা ভারতীয় জনতা পার্টির একটি শক্ত ঘাঁটি। ধলাই বিধানসভায় চারটি জেলা পরিষদ আসন রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ধলাই বাদে বাকি তিনটি আসনে শাসকদল বিজেপির প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। অতীতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দক্ষিণ ধলাইয়ের শ্যামাচরণপুর-শেওরারথল আসন ভারতীয় জনতা পার্টি কখনো জিততে পারেনি। তবে এবার এই আসনটিও দখল করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। দলীয় বিধায়ক থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত সবাই দিনরাত এক করে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রতিদিন এক একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঁচ-সাতটি করে সভা ঢ বিজেপি নেতারা।

ডিলিমিটেশনের পর পূর্বতন দক্ষিণ ধলাইয়ের নাম পরিবর্তন করে শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল জেলা পরিষদ আসন করা হয়েছে। এই আসনে ৪৯ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। আসনটি এবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ভারতীয় জনতা পার্টি এখানে প্রার্থী করেছে আইনে এলএলএম করা শবনম লস্করকে, যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী খাইরুল আমিন লস্করের মেয়ে। খাইরুল আমিন ১৯৯১ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত। এবার শবনমকে দিয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল আসনটি উদ্ধার করতে চাইছে বিজেপি।
ভারতীয় জনতা পার্টির ধলাই বিধানসভার নির্বাচনী ইনচার্জ সিতাংশু দাস বলেন, সংখ্যালঘু মানুষ এবার বিজেপির পক্ষে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঢ়হিমন্ত বিশ্ব শর্মার আশীর্বাদে শবনমের জয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারে ধলাইয়ের বিধায়ক নিহাররঞ্জন দাস বলেন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল বলে অপপ্রচার করে। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীন ভারতে বিজেপিই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারের সময়ে একজন মুসলিমকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী করেছিল। তিনি মিসাইল ম্যান ডক্টর এপিজে আব্দুল কালামের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ডক্টর কালামকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বিজেপির সংগঠন ও অনেক রাজ্যে রাজ্য সরকারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুসলমানদের স্থান দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তিনি উল্লেখ করেন প্রকৃত সাম্প্রদায়িক দল হলো কংগ্রেস। তাদের কথায় ও কাজে মিল নেই, তারা বিভাজনের রাজনীতি করে। মানুষ এখন আর বোকা নয়, তারা বুঝে গেছে উন্নয়ন মানে বিজেপি। নিহারবাবু বলেন, উন্নয়নের গতি সচল রাখতে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করতে হবে। কেন্দ্রে ও রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার। মানুষ বুঝে গেছে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে পঞ্চায়েত রাজও বিজেপির হওয়া প্রয়োজন। সেজন্যই ধলাই বিধানসভায় ৫৬ জন গ্রুপ সদস্য ও ৫ জন আঞ্চলিক পঞ্চায়েতের সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। যেখানে বিরোধী দল কংগ্রেস কোনো প্রার্থী খুঁজে পায়নি।
শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল জেলা পরিষদ আসনের ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী শবনম লস্কর এবং ধলাই-নরসিংপুর জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী পম্পি নাথ চৌধুরী, উভয়েই তাদের জয় নিয়ে শতভাগ আশাবাদী। পম্পি নাথ চৌধুরী উল্লেখ করেন, জয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েও ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস, নির্বাচনী ইনচার্জ সিতাংশু দাস নরসিংপুর মন্ডল সভাপতি সঞ্জয় কৈরি, মন্ডলের সম্পাদক প্রীতিশ চন্দ্র দাস সহ অন্যান্য নেতাকর্মী। শ্যামাচরণপুর-শেওড়াতল আসনে ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের জয় নিশ্চিত বলে দাবি করলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আসনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে ধলাইয়ের বাকি তিনটি আসন ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে থাকবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।