দশরূপক নাট্যকর্মশালার সমাপ্তি অনুষ্ঠান
বরাক তরঙ্গ, ৩০ এপ্রিল : দশরূপক সাংস্কৃতিক সংস্থা এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ থেকে তাদের নিজস্ব মহলা ঘরে যুবা ও শিশুদের জন্যে দু’টি পৃথক নাট্যকর্মশালার আয়োজন করেছিল। গত ২২ তারিখে এই নাট্যকর্মশালা শেষ হয়। এই উপলক্ষে সংস্থার মহলা ঘরে দু’দিনের এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথমদিন অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল রবিবার অনুষ্ঠান শুরু সন্ধ্যা সাতটায়। বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্বাদের বেশ ক’টি নাটিকা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশন করে। কোন নাটকের পরিধি দশ মিনিটের বেশি ছিল না। যে নাটকগুলো পরিবেশিত হয়েছে তার মধ্যে পথিক, মুক্তি, ড্রাইভিং, দুই পৃথিবী, ডিটেকটিভ ও কয়লাখনি উল্লেখযোগ্য। নাটকগুলোতে অভিনয় করেছেন গৌরব, প্রিয়াঙ্কা, দীপ, পার্থ, বলরাম, শুভ, বব, কাশী, তমন্না, ঋত্বিকা ও ঋতজা। নাটকগুলোর রূপসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন নয়না ও শব্দ প্রক্ষেপণে কাশী, বব ও অশোক। ওয়ার্কশপের মাধ্যমে তৈরি এ নাটকগুলো দর্শক মনোরঞ্জনে সমর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয় দিন, সোমবারের অনুষ্ঠান ছিল কর্মশালায় তৈরি শিশুদের দু’টি নাটকের উপস্থাপনা। সেদিন প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও দর্শক আসনে উপচে পরা ভিড় ছিল।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটায়।
শুরুতেই কাশ্মীরের বৈশানর ভ্যালিতে উগ্রপন্থীর গুলিতে নিহত নিরিহ পর্যটকদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এক মিনিটের নিরবতা পালন করে শোকাহত পরিবারদের প্রতি গভীর মর্মবেদনা জানানো হয় ও সরকারের উদ্দেশ্য সেইসব বর্বর আক্রমণকারী চিহ্নিত করে তাদের কঠোরতম শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়।
প্রথম নাটক শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। প্রথম নাটক ‘প্রতিযোগিতা’। নাটকটি আবর্তিত হয় ছাত্রের অভিভাবকদের মধ্যে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া নিয়ে রেষারেষিকে কেন্দ্র করে।এই অর্থহীন প্রতিযোগিতাযে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক মানবিকতাহীন যন্ত্রে পরিণত করতে চলেছে নাটকটিতে তাই বলতে চাওয়া হয়েছে। অভিনয়ে দুই মায়ের চরিত্রে অনুষ্কা ভট্টাচার্য, সুতপা নাথ চরিত্র দু’টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ভাল অভিনয় করেছেন হেড মাস্টার চরিত্রে পার্থিব দাস ও মাসীমা চরিত্রে অগ্রিমা চন্দ। অনান্য চরিত্রে ছিলেন দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, রিষিতা চক্রবর্তী, অদ্রিজা চন্দ, পার্থিব দাস (২), ভার্গবি পাল।
দুটি নাটকের মাঝখানে একখানি কৌতুক রসের নাটিকা পরিবেশন করেন জয়ন্ত বিকাশ পুরকায়স্থ ও বিনায়ক ভট্টাচার্য। তারপর গতদিনের যুবা কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেওয়া হয় ও শংসাপত্র বিতরণ করা হয়।

দ্বিতীয় নাটক ‘বিপদের বন্ধু’। নাটকটি বাঘ, পণ্ডিত ও শেয়ালের সেই প্রাচীন গল্পের নাট্যরূপ যেখানে শেয়ালের বুদ্ধিতে পন্ডিত বাঘের কবল থেকে মুক্ত হয়। এ নাটকের মূল বার্তা ‘দুষ্ট লোকের কথায় বিশ্বাস করতে নেই’ এই নীতিকথা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। এতে ভাল অভিনয় করেছে রাজা চরিত্রে আদিসত্ত পাল, বাঘ চরিত্রে সৃষ্টি রাহা, পণ্ডিত চরিত্রে কৃষ্ণাশীষ ভট্টাচার্য ও শেয়াল চরিত্রে ঐশী কর। এ ছাড়াও যারা অভিনয়ে করেছেন তাঁরা হলেন সপ্তার্ষ পাল, পূর্ণাভ নাথ, অনুষ্কা ভট্টাচার্য, সুতপা নাথ, পার্থিব দাস, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, ঋষিতা চক্রবর্তী, ঋতুরাজ চক্রবর্তী, অদ্রিজা চন্দ, পার্থিব দাস (২), ভার্গবী পাল, অগ্রিমা চন্দ। নাটকগুলোর রূপসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন দীপক নাথ ও নয়না চৌধুরী। শব্দ প্রক্ষেপণে ছিলেন অশোক সিনহা রাজকুমার। আলোকসম্পাতের দায়িত্বে ছিলেন গৌরব দাস। নাটকের শেষে সমস্ত শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার ও মানপত্র তুলে দেন সংস্থার
সভ্যরা। উপস্তিত সমস্ত দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।