ধামাইল বাঙালির জাতীয় নৃত্য হিসাবে বিবেচিত হবার যোগ্য : সূর্য্যসেন দেব
সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ধামাইল দিবস উদযাপন_____
বরাক তরঙ্গ, ২৬ মে : সোমবার শিলচর পার্ক রোডের সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রেক্ষাগৃহে সম্মিলিত লোকমঞ্চ শিলচরের উদ্যোগে উদযাপিত হল আন্তর্জাতিক ধামাইল দিবস। এদিন শুরুতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ধামাইল নৃত্যের জনক রাধারমণ দত্তের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
সংস্থার সভাপতি ড. অনুপ কুমার রায় ব্যক্তিগত কাজে শিলচরের বাইরে অবস্থান করায় এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার বরিষ্ঠ উপ-সভাপতি সুপ্রদীপ দত্তরায়। অনুষ্ঠানে মুখ্যবক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিলচর রাধামাধব কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সূর্য্যসেন দেব। তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন ধামাইল বাঙালির ঐতিহ্যবাহী লোক নৃত্য-গীত। যদিও ধামাইল গানের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তবুও বাউল কবি রাধারমন দত্তকে ধামাইল গানের জনক বা স্রষ্টা বলা হয়। তিনি বৈষ্ণব সহজিয়া সাধনায় মগ্ন হয়ে কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। তার ভক্তরা শুনে শুনে এই গানগুলি মুখস্থ করেছেন এবং লিখে রেখেছেন।

তাঁর সব গান এখনও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর মাধ্যমেই ধামাইল গান শ্রীহট্ট ছাড়িয়ে ত্রিপুরা, অসম থেকে আজ সারা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ধামালী বা ধুমালী ইত্যাদি শব্দ থেকে ধামাইল শব্দটি এসেছে। আবার কারও কারও মতে বান্ধামালী শব্দ থেকে ধামাইল শব্দটি এসেছে। বান্ধামালী শব্দের বাংলা অর্থ রঙ্গ-তামাশা। মধ্যযুগের বিভিন্ন সাহিত্যে ধামালী শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে মোট ১৪ বার ধামালী শব্দের উল্লেখ রয়েছে। সঞ্জয়ের মহাভারত, দৌলতকাজীর লোরচন্দ্রাণী ও সতীময়না, সোনাগাজীর সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল, মুহম্মদ কবীরের মধুমালতীতে ধামালী শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। ধামাইল হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়। ধামাইল শুধুমাত্র মহিলাদের নৃত্য নয়। পুরুষেরাও এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। বাংলাদেশ, অসম, ত্রিপুরা, উত্তরবঙ্গ সহ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেও ধামাইল জনপ্রিয়। সার্বিক বিচারে ধামাইল বাঙালির জাতীয় নৃত্য হিসেবে বিবেচিত হবার যোগ্য, মন্তব্য করেন সূর্য্যসেন। ধামাইলকে অধিক জনপ্রিয় করে তোলতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ধামাইলের উপর কর্মশালা আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক অঞ্জু এন্দো রাধারমন দত্তের জীবনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেন, রাধারমন দত্তকে নিয়ে যতটুকু চর্চা বা গবেষণা করা উচিত ছিল ততটুকু হয়নি। এটা আক্ষেপের বিষয়। তিনি অসংখ্য গান রচনা করে গেছেন। যার এখনও সব সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নন্দিনী চক্রবর্তী বলেন ধামাইল বাঙালির প্রাণ। যখন ধামাইল আজকের মতো জনপ্রিয় ছিল না তখন আমরা ধামাইলের চর্চা করেছি। ধামাইলকে সঠিক ভাবে চর্চা করতে হবে। আধুনিকতা এনে একে বিকৃত করলে ধামাইলের ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সভার প্রারম্ভে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজেপি কাছাড় জেলা কমিটির প্রাক্তন সভাপতি বিমলেন্দু রায়, দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রশাসনিক সঞ্চালক নীলাক্ষ চৌধুরী প্রমুখ।

এদিনের অনুষ্ঠানে মনমাতানো ধামাইল নৃত্য পরিবেশিত হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শান্তিকুমার ভট্টাচার্য, মঙ্গলা নাথ সহ সম্মিলিত লোকমঞ্চের সদস্যরা।
এদিনের, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থার প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ ও কোষাধ্যক্ষ ঝিমলি নাথ। অনুষ্ঠানকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে তোলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস, উপ-সভাপতি গৌতম সিনহা, গৌরী শঙ্কর নাথ, বরিষ্ঠ সদস্য দীপক নাথ, অঙ্কিতা ভট্টাচাৰ্য সহ অন্যান্যরা।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত যুবরাজ বরঠাকুরের আকষ্মিক প্রয়াণে শোক ব্যক্ত করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উল্লেখ্য এদিন লোক সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের স্বীকৃতি স্বরূপ হাইলাকান্দির মিতালীজ গ্রুপ এর তরফে সম্মিলিত লোকমঞ্চকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।