বরাক উপত্যকার প্রথম শিলচরে সিএনজি স্টেশনের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর
গুয়াহাটিবাসীদের জন্য পাইপ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের উদ্বোধন_____
বরাক তরঙ্গ, ১০ মে : মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা লোকসেবা ভবনে একটি অনুষ্ঠানে গুয়াহাটি নগরে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এই উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের সূচনা করে, গীতানগর এলাকার ১০১টি বাড়ি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে, তিনি ভার্চুয়ালি শিলচরে বরাক উপত্যকার প্রথম সিএনজি স্টেশন উদ্বোধন করেছেন। তিনি হাজো, সুয়ালকুচি, রঙিয়া এবং বাইহাটা চারিয়ালিতে পাইপ গ্যাস সরবরাহের কাজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন।
এই উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, ড. শর্মা পাইপলাইন ভিত্তিক প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্যোগটি, যা পূর্ব ভারতী গ্যাস প্রাইভেট লিমিটেড দ্বারা গ্রহণ করা হয়েছে, একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে একটি প্রতিশ্রুতিশীল পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে পূর্ব ভারতী গ্যাস প্রাইভেট লিমিটেড অসম গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং গেইল গ্যাস লিমিটেডের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য কামরূপ, কামরূপ মেট্রোপলিটন, কাছাড়, হাইলাকান্দি এবং শ্রীভূমি জেলার মধ্যে একটি সিটি গ্যাস বিতরণ (CGD) নেটওয়ার্ক তৈরি করা। তিনি অসমে CGD উদ্যোগ শুরু করতে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা ব্যবহৃত স্বচ্ছ বিডিং পদ্ধতির উপর মন্তব্য করেন এবং নিশ্চিত করেন যে রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে পাইপযুক্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য কাজ চলছে। তিনি যোগ করেন যে পূর্ব ভারতী গ্যাস প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটির জন্য ২,৬১৬.৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা কামরূপ এবং কামরূপ মেট্রোপলিটন জেলার মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৮ এর মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
চলমান কাজের পরিধি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, সিজিডি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭৬৫ কিলোমিটার মাঝারি ঘনত্বের পলিথিন (এমডিপিই) পাইপলাইন এবং ৪৩ কিলোমিটার স্টিল পাইপলাইন ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে ৩০,৬৯৩টি পরিবার গৃহস্থালি পাইপড প্রাকৃতিক গ্যাস (পিএনজি) সংযোগের জন্য নিবন্ধন করেছে, যার মধ্যে ৬,১৭৫টি ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ ‘লাস্ট মাইল’ সংযোগ পেয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গ্যাস গ্রিড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আসাম কার্যকরভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি মোকাবেলা করেছে। তিনি সাধারণ জনগণকে এই পরিচ্ছন্ন এবং সাশ্রয়ী শক্তির বিকল্প গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন।
ড. শর্মা হাজো, সুয়ালাকুচি, রঙ্গিয়া এবং বাইহাটা চারিয়ালিতে পাইপলাইন গ্যাস অবকাঠামোর সূচনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, মন্তব্য করে যে গুয়াহাটি একটি দেশের রাজধানী অঞ্চলের মতো শহরে গঠন নিতে শুরু করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে প্রস্তাবিত রিং রোডের চূড়ান্ত সম্পন্ন হওয়া আশেপাশের এলাকাগুলিকে একটি সংহত শহুরে বিস্তারে একত্রিত করবে। তিনি গুয়াহাটি-উত্তর গুয়াহাটি সেতু, যা ডিসেম্বর মাসে সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে, এবং পালাসবাড়ি-সুয়ালাকুচি সেতু, যা ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এর মতো প্রধান অবকাঠামো প্রকল্পগুলির আপডেটও প্রদান করেন। তাছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন যে নারেঙ্গি এবং কুরুয়া সংযুক্ত করার প্রস্তাবিত সেতুটি আঞ্চলিক সংযোগকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে, যার ফলে ভ্রমণের সময় কমবে এবং প্রবেশযোগ্যতা বাড়বে।
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সিএনজি স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি দেশের অন্যান্য অংশে, যেমন দিল্লি, বিদ্যমান মডেলগুলির উদাহরণ তুলে ধরেন, যা সিএনজি-চালিত যানবাহনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে উৎসাহিত করবে, এবং তিনি উল্লেখ করেন যে, এটি অসমের বায়ু গুণগত মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে রাজ্যে ২৩টি সিএনজি স্টেশন কার্যকরী রয়েছে। শিলচর স্টেশন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইলাকান্দি এবং শ্রীভূমিতে আরও সুবিধা প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান।
পহালগাঁওয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং জাতীয় স্তরের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, ড. শর্মা জানিয়েছেন যে আসাম রাজ্য সরকার তার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকবে। এই উপলক্ষে, মুখ্যমন্ত্রী “শিখা” শিরোনামের একটি স্মারক বই প্রকাশ করেছেন, যা পূর্ব ভারতী গ্যাস প্রাইভেট লিমিটেড দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য এবং জন উদ্যোগের মন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী বিমল বরা, হাজো নির্বাচনী এলাকার বিধায়ক জয়ন্ত মল্ল বরুয়া, মুখ্য সচিব ড. রবি কোটা, পূর্ব ভারতী গ্যাস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও মনুজ বরুয়া, অসম গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সহ-সভাপতি ইন্দ্র গগৈ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
