বরাকের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

।। প্রদীপ দত্তরায়।।
(গৌহাটি হাইকোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী)
১৯ মে : ১৯৬০ সালের ২৪ অক্টোবর অসম বিধানসভায় ভাষা আইন পাস হয়ে যায় । এর আগে শিলচরে যে ঐতিহাসিক ভাষা সম্মেলন হয়েছিল সেখানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। তৎকালীন অসমের পার্বত্য নেতৃবৃন্দের কোন প্রতিবাদ কেউ ভ্রুক্ষেপ করেনি বিধানসভার তৎকালীন সদস্যরা। ওইদিনই বিধানসভায় বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করা হয়ে যায়। অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস হয়ে যায়। যে গোয়ালপাড়া জেলা পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল তাকে অসমে এনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেখানেও অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়ে যায়। পার্বত্য অঞ্চলের নেতারা শংকিত হয়ে পড়েন। এই অসমিয়া প্রভূত্ববাদের বিরুদ্ধে গারো পাহাড়, খাসি পাহাড়, জয়ন্তিয়া পাহাড়, নাগা পাহাড়, মণিপুর, লুসাই পাহাড় ইত্যাদিতে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। সীমিত  পরিমাণ হলেও কার্বি  আংলং এবং উত্তর কাছার পার্বত্য অঞ্চলেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। পার্বত্য জনজাতিদের মতামতকে উপেক্ষা করার এই সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিতে পারেননি। তৎকালীন অবিভক্ত কাছাড়ে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ কাছাড় সিলেটের মতোই বঙ্গপ্রদেশ থেকে অসমে সংযোজিত অংশ। এই অঞ্চলের মানুষ বাংলাভাষী ফলে একক অসমিয়া ভাষা নীতি এ অঞ্চলের মানুষ মেনে নিতে পারেননি। এই অঞ্চলেও অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

বিধানসভায় ভাষা আইন পাস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি করিমগঞ্জের রমনী মোহন ইনস্টিটিউটে কাছাড় জেলা জনসম্মেলন আহবান করা হয়। ওই সম্মেলনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরী লিখিত ভাষণ পাঠ করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের ১৩ বছরের ইতিহাস আমাদের পক্ষে গৌরবজনক নহে আসাম রাজ্যে আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার পদে পদে ক্ষুন্ন হচ্ছে। অহম শব্দ থেকে ‘আসাম’ নামের উৎপত্তি কি অসম অর্থাৎ অসমতল ভূমি থেকে প্রদেশের নাম আসাম এর সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিতর্ক প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। পার্বত্য জেলাগুলো, বাংলা ভাষাভাষী কাছাড় ও গোয়ালপাড়া জেলা এবং পাঁচটি অসমিয়া ভাষাভাষী জেলার সমন্বয়ে আসাম গঠিত। এই কারণে রাজ্যে বহুভাষা, বহু কৃষ্টি বহু ঐতিহ্যের ধারক বাহক । এই বিভিন্ন রূপকে আশ্রয় করেই এই বিচিত্র প্রকৃতিতে স্বীকৃতি দান করেই আসামের উৎপত্তি অসমের অগ্রগতি অসমের শ্রীবৃদ্ধি।’ তার এই ভাষণে ওই সময়কার অসমের ভৌগোলিক পরিমণ্ডল স্পষ্ট হয়ে আছে, স্পষ্ট হয়ে আছে ভাষাবিন্যাসগত দিক। কিন্তু খুবই দুঃখের ব্যাপার এই সত্যকে অস্বীকার করে একশ্রেণীর সংকীর্ণমনা, দূরদৃষ্টিহীন, উচ্চ জাত্যাভিমানী লোক রাজ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে একক ভাষা নীতি চাপিয়ে দেওয়ার খেলায় মেতে উঠেছিল। অসম রাজ্য শুধুমাত্র অসমিয়া ভাষী মানুষের। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ যেন এ রাজ্যে অবাঞ্ছিত। অসম বলতে তৎকালীন মানচিত্রে পুরো অংশকেই এই রাজ্যের অঙ্গ হিসাবে মনে করলেও একশ্রেণীর অসমিয়াভাষী মানুষ মনে করতেন মানচিত্রের অধীন সমস্ত অঞ্চলেই অসমিয়দের আধিপত্য বজায় থাকা উচিত। আর বিরোধের সূত্রপাত এখান থেকেই। অসমিয়া ছাড়া তৎকালীন অসমে বসবাসকারী প্রতিটি জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে রেখে দেওয়ার এক অপপ্রচার শুরু হয়ে যায়। অসমিয়া ভাষা গোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা চাকরি এবং ভারতীয় নাগরিকের সব মৌলিক অধিকার দেওয়া এবং যারা অসমিয়াভাষী নয় তাদের সুপরিকল্পিতভাবে শিক্ষা চাকরি এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সরকারে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরাও এই ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সবল পদক্ষেপ না নিয়ে ভ্রান্তির পথেই পা ফেলা সমীচীন মনে করেন।

অসম সরকারের এ ধরনের একপেষে নীতি গ্রহণের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ করা হলো তৎকালীন কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার এই প্রতিবাদকে আমল দেয়নি। তৎকালীন কাছাড়ের মানুষ অস্তিত্বের সংকটে ভুগতে থাকেন। ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হওয়ার চিন্তায় তখন মানুষের মধ্যে লড়াই করার একটা মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়। স্লোগান উঠে, ‘জান দেব তবু জবান দেব না’। রমণীমোহন ইনস্টিটিউটের সেই সভার পর কাছাড় জেলার তিনটি মহকুমায় কমিটি গঠন করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শতাধিক সভা করে ভাষা আন্দোলনের শপথ গ্রহণ করা হয়। এই আন্দোলনে সকল শ্রেণীর জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য পরিতোষ পাল চৌধুরীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ পদযাত্রা শুরু করেন। গ্রাম শহর চা বাগান শ্রমিক কৃষক ছাত্র সবাইকে এক সূত্রে গাঁথার  জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেন ভাষা আন্দোলনের সেনানিরা। থানে স্থানে পালিত হয় সংকল্প দিবস। এরপর ১৯ মে রেল অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। সত্যাগ্রহীরা গণতান্ত্রিক উপায়ে রেললাইনের উপর বসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। সত্যাগ্রহীরা অচল করে দেন জেলা প্রশাসন সমস্ত কার্যালয়। প্রশাসনিক কর্তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায় শিলচরে তারা তখন তিনটি অস্থায়ী কারাগার হলে সত্যাগ্রহীদের নিয়ে তাতে ভরতে থাকে। শিলচর রেল স্টেশনে তখন সত্যাগ্রহীদের আন্দোলন শেষ পর্যায়ে। কর্তব্যরত সশস্ত্র প্রহরীরা এমন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দেখে অবাক। বেলা তখন ২-৩৫ মিনিট উপোর মহল থেকে সেটা দিসপুর না কোথাকার বলা মুশকিল নির্দেশ এল তারপর সশস্ত্র বাহিনী সত্যাগ্রহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুটতে শুরু করল। একদল শুয়ে পড়ে নিজেদের গুলি আঘাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও আরেক দল বুক চিতিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। পুলিশের গুলিতে ঝাজরা হয়ে গেল কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, কুমুদ রঞ্জন দাস, কানাইলাল নিয়োগী, সুকমোল পুরকায়স্থ, সুনীল সরকার, হিতেশ বিশ্বাস, তরণী দেবনাথ, বীরেন্দ্র সূত্রধর ও সত্যেন্দ্র দেব। গুলি লেগেছিল আরো কয়েকজনের তারা অবশ্য হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। নিজের বুকের রক্তে ভাষা জননীর পূজা করে গেছেন এই একাদশ শহিদ। বিশ্বের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন নিজেদের আত্ম বলিদান এর ইতিহাস।

শান্তিপ্রিয় সত্যাগ্রহীদের উপর গুলি চালনার এই ঘটনা সারাদেশে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রধান শহরের সংবাদপত্র গুলিতে এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর ফলাও করে প্রচার হয়। তখন বেকায়দায় পড়ে যায় অসম এবং কেন্দ্রীয় সরকার। গুলি চালনার ঘটনার তদন্ত করতে তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী এমসি চ্যাটার্জির নেতৃত্বে বেসরকারি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় এই কমিশনের সদস্য ছিলেন। ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, ত্রিদিব চৌধুরী, ত্রিগুনা সেন, রেনুকা চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ইলিয়াস, অজয় ঘোষ প্রমুখ শিলচরে ছুটে এসেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী এই ঘটনা শুনে হতবাক। চারদিক থেকে যখন চাপ সৃষ্টি হচ্ছে তখন অসম সরকার বাধ্য হয়ে মেহরোত্রা কমিশন গঠন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা মেহরোত্রা কমিশনের রিপোর্ট আর কোনদিনই প্রকাশিত হয়নি। এটা হবেও না, কারণ এখানে নিরীহ মানুষের উপর যে বর্বরচিতক গুলি চালনা হয়েছে এর কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা তুলে ধরার মতো কিছুই ছিল না কমিশনের হাতে।  ফলে এই রিপোর্ট ধামাচাপা দিয়েই রেখে দেওয়া হয়। ৬১ সালের উনিশে মে-র পর আবার ১৯৮৬ সালে করিমগঞ্জে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন জগন – যীশু। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্তের বরাক সফরের প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই তাদের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়। ১৯৬১ সালের পর ১৯৭১ সালেও অসম মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ সার্কুলার জারি করে অসমিয়া ভাষা সারা রাজ্যে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। অসমে অসমিয়া ছাড়া অন্যান্য ভাষিক  গোষ্ঠীর অধিকারকে খর্ব করার জন্য লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে আসা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাঙালিরা প্রবল বিরোধিতা করায় বাঙালিদের প্রধান শত্রু ধরে নিয়ে পরবর্তীকালে যখন অসম আন্দোলন সংঘটিত হয় তখন বাঙালিদের বিদেশী বলে লক্ষ্য স্থির করে চরম নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনা অন্য নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি

বরাকের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

উনিশ মে গুলিচালনার পর কেবল কলকাতার সংবাদপত্রই নয় মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত হিন্দু পত্রিকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাতে কাছাড় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সে পরামর্শ দিয়েছে। এরপরই লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অসমের সমস্যা সমাধানে অন্য পদক্ষেপ নিতে হবে এটা বুঝতে পারেন। অসমের অবস্থা অনুধাবন করে তখন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু পার্বত্য অঞ্চল গুলোকে অধিক স্বশাসন দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে পটাস্কর কমিশন গঠন করেন এটা হিল অ্যারিয়া কমিশন নামেও জানা যায়। এই কমিশনের বৈঠক শিলং এ অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু কমিশনের প্রস্তাবকে পার্বত্য নেতৃবৃন্দ এবং সমতল অসামের নেতৃবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে রাজ্যটির বহুধা বিভক্ত হওয়ার পটভূমিকা তখনই তৈরি হয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই স্বশাসন অর্জনের পথে পার্বত্য নেতারা এগিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন এটা বললে ভুল হবে না। তারা বুঝতে পারেন নীরব বসে থাকলে তাদের ভাষা সংস্কৃতি, জাতীয় ঐতিহ্য এবং অস্তিত্ব সবই বিপন্ন হয়ে যাবে। তাই একে একে নাগা পাহাড় জেলা হয়ে যায় নাগাল্যান্ড, মনিপুর হয়ে যায় পৃথক রাজ্য , খাসি জয়ন্তিয়া এবং গারো পাহাড় জেলা নিয়ে গঠিত হয় মেঘালয় এবং লুসাই  পাহাড় জেলা মিজোরাম রাজ্য হিসেবে পৃথক হয়ে যায়।

পরিস্থিতি সবদিক থেকেই বিগড়ে যাওয়ায় আসাম সরকার বাধ্য হয়ে ভাষায় বিল প্রত্যাহার করে আবার তা সংশোধিত আকারে পেশ করে। সংশোধিত বিলে বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং অসমের বাকি অংশে অসমিয়া। কিন্তু এর মধ্যেই সমতল উপজাতি বড়োরা তাদের নিজেদের মাতৃভাষা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে তারা পৃথক রাজ্যের দাবিতেও আন্দোলন করতে থাকেন। ভাষার অধিকার আদায়ের দাবিতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সংগঠনগুলিও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাষার অধিকার আদায়ের রক্ষার আন্দোলনে গিয়ে সুদেষ্ণা সিনহা নামের একটি মেয়ে আত্ম বলিদান দেয়। ফলে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।  বড়ো জনগোষ্ঠীর তীব্র আন্দোলনের ফলে পৃথক রাজ্য না হলেও তাদের বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বড়ো ভাষাকে রাজ্যের সহযোগী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অসমের কয়েকটি জেলায় মণিপুরী ভাষাকে সহযোগী রাজ্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভাষাবিদ্বেষ কিছুটা হ্রাস পেলেও বি বিভাজনের ধারা এখনও নির্মূল হয়নি। ফিলোনজিয়ার স্বার্থ রক্ষার নামে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাঙালিরা এখন স্যান্ডউইচ হয়ে আছেন। অদূর ভবিষ্যতে বাঙালিদের অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা তা এখনই বলা কঠিন।

বরাকের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

বরাকের ভাষা আন্দোলনের যে ইতিহাস রয়েছে তাকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই মান্যতা দেওয়া হয়নি। আন্দোলনের দীর্ঘ বছর পরও শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত সত্যাগ্রহীদের শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ এর অনেক পরে সংঘটিত অসম আন্দোলনের শহিদদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই বৈষম্য এখনো আগের মতোই চলছে। বরাকের ভাষা শহিদদের জন্য শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ভাষা শহীদ স্টেশন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে। রেল মন্ত্রক প্রস্তাবের অনুমোদন চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছিল কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এর কোন ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়নি হয়নি। সরকারি নিয়ম হল কোনো রাজ্যের রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করতে হলে রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। অসম সরকার এই অনুমোদন তো দেয়নি। একটি ভুঁইফোড় সংগঠন ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণের বিরুদ্ধে মতামত তুলে ধরছে বলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভাষ্য দেওয়া হয়। এটা দিয়ে একটা চক্রান্তমূলক বিষয় তা কারও বুঝতে বাকি নেই। শিলচর রেলওয়ে স্টেশনের নাম ভাষাশহিদ স্টেশন করার পক্ষে জনমত রয়েছে। কোন জনগোষ্ঠীর মানুষ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে না। ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণে প্রস্তাব অনুমোদন করলে যদি ভাষা শহিদদের স্বীকৃতি দিতে হয় সেই ভয়েই রাজ্য সরকার নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। বরাকের মানুষ এটাও উপলব্ধি করতে পারছে।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Author

Spread the News