অগপ এমনকি সর্বার আমলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাক এতটা বঞ্চিত হয়নি : প্রদীপ

বরাক তরঙ্গ, ৮ মার্চ : বরাকের বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এর সমাধান না হলে বরাক পৃথকীকরণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর কর্মকর্তারা।

ভয়াবহ বেকার সমস্যাকে জিয়িয়ে রেখে বরাককে পৃথকীকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে : বিডিএফ

এদিন বিডিএফ কার্যালয়ে সাংবাদিক  ডেকে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, বরাক উপত্যকার রেজিস্ট্রিকৃত বেকারের সংখ্যা ইতিমধ্যে ছয় লক্ষ অতিক্রম করেছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর যে প্রচুর ছাত্রছাত্রী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বেরোচ্ছেন তাঁদের কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ নেই। শহরগুলিতে হাজার হাজার ই রিক্সা চলছে যার অধিকাংশই চালাচ্ছেন স্নাতক এমনকি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা।
তিনি বলেন, শিলচরে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন যে বরাক উপত্যকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সমস্ত পদ এখানকার ছেলেমেয়েদের জন্য সংরক্ষিত হবে। সেই প্রতিশ্রুতি কেন রক্ষিত হলনা তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলেন তিনি। প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে বরাকের যে কোন সরকারি অফিসে গেলেই দেখা যায় উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর অব্দি, ইঞ্জিনিয়ার থেকে কেরানী অব্দি  কর্মীরা নিযুক্তি পাচ্ছেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে।

তিনি বলেন, বিগত যে একলক্ষ নিয়োগ হয়েছে তাতে বরাক উপত্যকা থেকে নিযুক্তি পেয়েছেন  নগন্যসংখ্যক। অসমের এসিএস, এপিএস আধিকারিকদের মধ্যেও বর্তমানে বাঙালিদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অথচ যখন শিলং অসমের রাজধানী ছিল তখন অসমের উচ্চ আধিকারিকদের ষাট শতাংশ পদে বাঙালিরা দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন। প্রদীপ দত্তরায় এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই বৈষম্যের সমাধান না হলে অনতিবিলম্বে বরাকে আগুন জ্বলবে।

অগপ এমনকি সর্বার আমলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাক এতটা বঞ্চিত হয়নি : প্রদীপ

প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন যে আসুর নেতৃত্বে আশির দশকে আসাম উত্তাল হয়েছিল ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু সেই আসুর নেতারাই যখন অগপ সরকারে ছিলেন তখন তাঁরা বরাকের ছেলে মেয়েদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চনা করেননি। বরাকে অসম সাহিত্য সভার অধিবেশনও সংঘটিত হয়েছে। শুধু তাই নয় সর্বানন্দ সোনোয়াল যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনও তার বরাক ব্রহ্মপুত্র পাহাড় ভৈয়াম শ্লোগান বরাকের জনগন সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। সেই স্লোগান আজ নেই কেন এই প্রশ্ন তুলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শিলচরে ভাষা শহিদ স্মারক সংগ্রহশালা তৈরির জন্য আট কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন সর্বানন্দ সোনোয়াল।‌ শিলচরে বিবেকানন্দ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি, যারজন্য পাঁচ বিঘা জমি দান করা হয় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। কিন্তু বলেন, সর্বানন্দ সোনোয়ালের আমলেও বরাক উপত্যকার ছেলে মেয়েদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এতটা বঞ্চিত হতে হয়নি। কিন্তু একই বিজেপি সরকারের গত চার বছরের কার্যকালে এই সমস্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব করে বরাককে পৃথকীকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে এদিন মন্তব্য করেন তিনি।

বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন, এডিআরই লিখিত পরীক্ষার যে ফলাফল সাম্প্রতিক ঘোষিত হয়েছে তাতেও বরাক থেকে উত্তীর্ণের সংখ্যা নগণ্য বলে তাঁদের কাছে খবর আছে। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন যে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হচ্ছে অর্থাৎ প্রকারান্তরে বোঝানো হচ্ছে যে বরাকে তেমন মেধাবী নেই। হৃষীকেশ বলেন, বরাকের প্রার্থীরা ইউপিএসসি সহ সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হচ্ছেন তাঁরা সামান্য এডিআরই পরীক্ষায় বারবার বিফল হচ্ছেন এই যুক্তি ধোপে টেকেনা। তিনি বলেন, সরকারকে এর আগেও জেলাভিত্তিক নিযুক্তির তালিকা প্রকাশ করার জন্য বিডিএফ এর তরফে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁতে কর্ণপাত করেনি সরকার। তাই তাঁরা মনে করেন অবশ্যই বরাকের প্রার্থীদের  প্রতি বৈষম্য  হচ্ছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে এই ব্যাপারে কোন কার্যকরী কোন উদ্যোগ দেখা না গেলে বরাকের বেকারদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন সংঘটিত করার উদ্যোগ নেবে বিডিএফ। এদিনের কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জয়দীপ ভট্টাচার্য, সজল দেবরায়, নবারুণ দেচৌধুরী প্রমুখ।

Author

Spread the News