ভুবনেশ্বরে শ্রমিক ইউনিয়ন এআইইউটিইউসির সম্মেলন সম্পন্ন
১৯ ডিসেম্বর : শ্রমিক ইউনিয়ন এআইইউটিইউসির ২২তম সর্বভারতীয় সম্মেলন ভুবনেশ্বরে সম্পন্ন হল। দেশের ২৪টি রাজ্যের প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। ১৫ তারিখ প্রকাশ্য সভার মধ্য দিয়ে এই সম্মেলনের কাৰ্যক্ৰম শুরু হয়। প্রকাশ্য সভায় ৫০ হাজারের অধিক লোক জমায়েত হন। ১৬ ডিসেম্বৰ প্ৰতিনিধি সভায় অসম, ত্রিপুরা, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, বিহার, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও পন্ডিচেরি সহ ২৪টি রাজ্যের প্রায় ১৬০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত হন। ওড়িশার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের প্রায় হাজার শ্রমিক প্রকাশ্য সভায় জমায়েত হয়েছিলেন। এছাড়াও সারা দেশের মিড ডে মিল, আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, ব্যাঙ্ক কর্মচারী সহ বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি শ্রমিক কর্মচারীরা দলে দলে প্রকাশ্য সভায় জমায়েত হন।
বাংলাদেশ নেপাল ও প্যালেস্টাইনের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি মিশেল মাকাইবা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশ্য সভায় বক্তব্য রাখেন ইউটিইউসি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক শংকর দাস গুপ্ত, সত্যবান, স্বপন ঘোষ, এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি মিসেল মাকাইবা প্রমুখ। প্রকাশ্য সভায় সভাপতিত্ব করেন কে রাধা কৃষ্ণান। বক্তারা বলেন, ভারতবর্ষে শ্রমিকদের উপর চতুর্দিক থেকে নির্যাতন এবং আইন করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সরকার শ্রমকোড এনে শ্রমিকদের প্রায় সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং সর্বগ্রাসী আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। বিশেষ করে সোভিয়েট ইউনিয়ন সহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অবর্তমানে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সহ ভারতবর্ষেও শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে দেশে দেশে ফ্যাসিবাদী সরকাররা বিশেষ করে ভারতবর্ষে ক্ষমতায় আসীন কংগ্রেস এবং বিজেপি সরকার একটার পর একটা শ্রমিক বিরোধী আইন পাস করে শ্রমিকদের টুটি চিপে ধরেছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তোলা ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা নেই বলে বক্তারা মন্তব্য করেন। এই দিনই অর্থাৎ ১৫ তারিখ সন্ধ্যা ছটার সময় প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় এআইটিইউসি, সিআইটিইউ, এআইসিসিটিইউ, টিইউসিসির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।
১৬ এবং ১৭ ডিসেম্বর দুই দিন প্রতিনিধি সভায় প্রস্তাব এবং সম্পাদকীয় প্রতিবেদন সহ সরকারের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিক আন্দোলনের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে অন্যান্য ১৯ টা প্রস্তাব প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার পর প্রস্তাবের সংযোজন এবং সংশোধন সহ প্রস্তাবগুলি প্রতিনিধি সভায় সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়।
১৬ ডিসেম্বর প্রতিনিধি সভা শুরু হয় রক্তপতাকা উত্তোলন এবং দেশ-বিদেশের গণ আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মাধ্যমে। প্রতিনিধি সভায় অসমের সাত জন সহ ১৯০ জনের একটি শক্তিশালী সর্বভারতীয় কাউন্সিল গঠিত হয়। অসম থেকে যাদেরকে এই কাউন্সিলে নেওয়া হয় তারা হলেন অজিত আচার্য, অরুণাংশু ভট্টাচার্য, ভবতোষ চক্রবর্তী, হানিফ আলি সেখ, ময়ূখ ভট্টাচার্য, প্রমোদ ভাগবতী, ইদ্রিস আলি প্রমুখ।
সর্বশেষে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং সুন্দরভাবে প্রতিনিধিদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে তিন দিনের এই কার্যসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।